থার্মোকল দিয়েই তৈরি মণ্ডপের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।
থার্মোকল ব্যবহার করেই বহু মণ্ডপে দেওয়া হচ্ছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা। কিছু ক্ষেত্রে মিলছে পুরস্কারও। অথচ নিয়ম বলছে, মণ্ডপ হোক বা অন্য কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান। কোনও ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না থার্মোকল। কারণ তা পরিবেশবান্ধব নয়। ফলে প্রশ্ন উঠছে, যাঁরা কোনও পুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করছেন তাঁরা কি নিয়ম অদৌ জানেন? নাকি ভাল করে পর্যবেক্ষণ না করেই পুরস্কারের জন্য বাছাই করছেন?
থার্মোকল অপচনশীল। পরিবেশে দূষণ ছড়ায়। পরিবেশ এদের মানাতে পারে না। মণ্ডপ কিম্বা কোনও অনুষ্ঠানে তাই থার্মোকল ও প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস ব্যবহার নিয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা বহু পুরনো। রাজ্য সরকারও পরিবেশ দূষণ রোধে থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করতে সক্রিয়। নানা সময়ে রাজ্য জুড়ে সরকারি তরফে ধরপাকড়ও করতেও দেখা গিয়েছে। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই দেশ জুড়ে প্লাস্টিক থার্মোকল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এরপরই পুজোয় মণ্ডপ কিম্বা পুজো প্রাঙ্গণে যাতে কোনও ভাবে থার্মোকল ব্যবহার না হয়, তার জন্য তৎপর হয় প্রশাসন। শুধু মণ্ডপ নয়। প্রতিমাতেও কোনও ভাবে থার্মোকল বা প্লাস্টিক জাতীয় কোনও দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না— গত বছর পুজোর আগেই ঘাটাল মহকুমার সংশ্লিষ্ট সমস্ত পুজো কমিটিগুলিকে ওই নিয়মের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল মহকুমা প্রশাসনের তরফে। তার পরেও অবশ্য পুজো মণ্ডপগুলিতে দেদার ব্যবহার হচ্ছে থার্মোকল, প্লাস্টিক থেকে সিন্থেটিক নানা কাপড়ও!
উদ্যোক্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, দুর্গাপুজোর মণ্ডপে থার্মোকল একটা বড় উপাদান। মূলত থিম ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে ব্যবহার করা হয় নানা উপকরণ। তার মধ্যে থার্মোকল একটি বড় সহযোগী উপদান। খরচও তুলনায় কম। সাধারণত খুব বড় বড় বাজেটের পুজো গুলিতে থার্মোকলের বদলে ফাইবার, লোহা, ফাইবার মোল্ড, প্লাস্টার অফ প্যারিস প্রভৃতি বেশি ব্যবহার হয়। তবে অধিকাংশ পুজো মণ্ডপ থার্মোকলের একটা পরিমাণ কাজ থাকে। জেলা শহর কিম্বা মহকুমা এলাকায় মূলত আশি ভাগ মণ্ডপে থার্মোকল ব্যবহার হয়ে থাকে বলে খবর। সেখানে বাঁশ, বাটাম, কাগজ, পলিথিন, থার্মোকল দিয়েই ফুটিয়ে তোলা হয়। তবে ওই নিয়ম যে এখনও নেহাতই খাতায় কলমে তা ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন দুর্গোপুজোর মণ্ডপ বড় প্রমাণ। এমনিতে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকশো দুর্গাপুজো হয়। তার মধ্যে মহকুমার ঘাটাল, দাসপুরে একাধিক বড় বাজেটের পুজো হয়। চন্দ্রকোনাতেও একাধিক বড় মণ্ডপ হয়। সে গুলির বহু মণ্ডপই থার্মোকল ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, এ বার সেই সব একাধিক মণ্ডপ পেয়েছে নানা পুরস্কারও। তার মধ্যে যেমন সেরা মণ্ডপ বিভাগে বিশ্ব বাংলার শারদ সম্মান রয়েছে, তেমনই পুরসভা, পঞ্চায়েত সমিতি এমন একাধিক পুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করেছে যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে থার্মোকল। ঘাটাল দাসপুর ও চন্দ্রকোনায় সব ক্ষেত্রেই ছবিটা একই। প্রশ্ন উঠেছে সেখানেই। কোনও সংস্থার নজর এড়াতেই পারে, তা বলে বিশ্ব বাংলা মানের শারদ সম্মানে পুরস্কার জুটছে কী ভাবে?