—প্রতীকী চিত্র।
জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতার মায়ের নামে খাস জমির পাট্টা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুরাহা চেয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই জমিতে বংশানুক্রমে চাষ করে আসা এক কৃষকের পরিবার। মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের মাঝে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আশায় শাসক দল অস্বস্তিতে পড়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ তরুণ জানা-র মা সুদক্ষিণা জানার নামে ভূমি দফতর ৩৬ ডেসিমেল খাস জমির পাট্টা দিয়েছে বলে অভিযোগ। বিশাল পাকা বাড়ির পাশাপাশি পর্যাপ্ত সম্পত্তি রয়েছে তরুণের। কী ভাবে তাঁর মায়ের নামে ভূমিহীনদের প্রাপ্য পাট্টা পৌঁছে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তরুণ জানা-র যুক্তি,"আমার মায়ের নামে কোনও জমির পাট্টা নেই। একটা জমি অদল-বদল করা হয়েছে। আমাকে কলুষিত করার জন্যই মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে।’’ এ বিষয়ে দেশপ্রাণ ব্লকের ভূমি আধিকারিকের বক্তব্য,"পাট্টা বাতিলের জন্য নির্দিষ্ট একটি আইন রয়েছে। তা কার্যকর করতে পারেন একমাত্র মহকুমাশাসক।" কী ভাবে প্রকৃত চাষির পরিবর্তে বিত্তবান শাসক নেতার মা পেলেন খাস জমির পাট্টা? এ বিষয়ে ভূমি দফতরের ওই আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘সাত- আট বছর আগে এটা ঘটেছে। বিষয়টি দেখতে হবে।’’
তরুণ জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ। একই সঙ্গে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ সাল থেকে একটানা তিনি কাঁথি দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতি ছিলেন। সে সময় তরুণের মা সুদক্ষিণা জানাকে ৩৬ ডেসমিল চাষের জমির পাট্টা দেওয়া হয়। দেশপ্রাণ ব্লকের পূর্ব মুকুন্দপুর মৌজায় ৪৯৯ নম্বর দাগে ওই সম্পত্তি রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জমিতে তিন পুরুষ ধরে চাষ করে আসছে স্বপন মাইতি নামে এলাকার এক কৃষকের পরিবার। স্বপন এই মরসুমেও সেখানে আখ লাগিয়েছেন। স্বপনের কথায়,"৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বাবাকে ওই জমিতে চাষ করতে দেখেছি। বাম জমানায় পাট্টার জন্য বাবা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেও বেশ কয়েকবার তরুণের কাছে গিয়েছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, আমাদের পাট্টা পাইয়ে দেওয়া হবে।"
কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপন কিংবা তাঁর পরিবারের কারও নামে জমির পাট্টা হয়নি। উল্টে মাস কয়েক আগে তাঁরা জানতে পারেন, ওই জমি র পাট্টা পেয়েছেন তরুণের মা, সুদক্ষিণা দেবী। স্বপন বলছেন,"একাধিকবার ব্লকের ভূমি আধিকারিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কিন্তু তিনি বুঝিয়েছেন, পাট্টার কোনও প্রয়োজন নেই। পাট্টা ছাড়াই যেন আমি জমি চাষ করি। এর পর 'সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী'-তে অভিযোগ জানাই। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে ভূমি দফতর।’’
মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন পরিস্থিতিতে শাসকদলের নেতার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে নিজের মায়ের নামে খাস জমির পাট্টা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরব হচ্ছেন বিরোধীরা। দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক তথা বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ কুমার দাস বলেন,"বাংলায় যা কিছুই হয়, সবটাই মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা তাঁর দলের নিচু তলার নেতারা অনুপ্রাণিত। সংবাদ মাধ্যমে যেভাবে দেখেছি যে, কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের লোকেদের নামে ৩৭ টা জায়গা রয়েছে। বিত্তবান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষও নিজের মায়ের নামে খাস জমির পাট্টা নিয়েছেন। পরে মায়ের অবর্তমানে ওই চাষের কাছ থেকে জমি দখল করে নেবেন শাসক নেতা।"
একই রকম ভাবে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হিমাংশু দাস বলেন,"বাড়ির সামনেই ব্লকের ভূমি দফতরের অফিস। তাই তরুণ প্রভাব খাটিয়েছেন। ওঁর যা সম্পত্তি রয়েছে তাতে কোনওভাবেই তাঁর মায়ের পাট্টা পাওয়া অনুচিত। এটা ভূমি দফতর সঠিক কাজ করেনি। ওই জমির চাষিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।"