হেলে যাওয়া নির্মীয়মাণ বাড়ি ঘিরে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
শুরু থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠেছিল। তা সত্ত্বেও নীচু জমিতেই তৈরি হচ্ছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল প্রকল্পের দোতলা পাম্প হাউস। বুধবার নির্মীয়মাণ সেই ঘরের একাংশ হেলে গেল। তারপরে রাতে ওই ঘরের ইটও কার্যত ফাঁকা হয়ে গেল! দাসপুর-২ ব্লকের কামালপুরের এই ঘটনায় হইচই শুরু হয়েছে।
এই ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বৃহস্পতিবার ওই প্রকল্প এলাকায় যান ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পদস্থ আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে যান। আপাতত ওই জল প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘাটালের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার মলয় কয়াল বলেন, “ঘরটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের বাকি কাজ ঠিকঠাকই চলছে। নতুন করে অন্যত্র ঘর তৈরি হবে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” ইটের বিষয়টির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উদ্যোগে দাসপুর-২ ব্লকের কামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জোতকানুরামগড়ে ওই জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতেই ওই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পাইপ লাইন পাতার সঙ্গে পাম্প হাউস তৈরি হচ্ছিল। বন্যা প্রবণ এলাকা হওয়ায় ঘরটি উঁচু করে দোতলা করা হচ্ছিল। সরকারি জমিতেই তৈরি হচ্ছিল পাম্প হাউসের ওই ঘর।
স্থানীয় সূত্রে খবর, যে জমির উপর ঘরটি তৈরি হচ্ছিল, সেটি কার্যত জলাভূমি। স্থানীয় একটি নয়ানজুলির একাংশ ভরাট করে স্কুলের মাঠ তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। মাঝপথে সেখানেই জল প্রকল্পের জন্য ওই ঘর তৈরি শুরু হয়। পানীয় জলের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ঘর কেন এরকম জমিতে করা হচ্ছে—শুরুতেই সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তবে তাতে গুরুত্ব না দিয়ে গ্রামবাসীদের এড়িয়ে ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। তবে তা আর শেষ করা গেল না।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি ও সিপিএম। ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল বলেন, “জল প্রকল্পের দুর্নীতির তদন্ত হোক। গ্রামবাসীরাই সেটা চান। আমরাও তাই চাইছি। প্রশাসন যেন সঠিক তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়।” স্থানীয় সিপিএম নেতা রণজিৎ পালের প্রশ্ন, “কাদের ভুলে সরকারের লক্ষ লক্ষ লোকসান হল, তার তদন্ত জরুরি। দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে।”
দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আশিস হুতাইত অবশ্য বলেন, “একটা নির্মীয়মাণ প্রকল্প। সেখানে দুর্নীতির প্রশ্ন এল কোথা থেকে? নীচু জমিতে নির্মাণ হচ্ছিল। তাই ঘরটি ভেঙে ফেলছে জনস্বাস্থ্য দফতর। অন্যত্র ফাঁকা সরকারি জমি রয়েছে। সেখানে ফের ঘর তৈরি হবে। পাইপ লাইনের কাজ ঠিকঠাক চলছে।”