—প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও জেলায় দলের দুই প্রথম সারির নেতা উত্তম বারিক ও অখিল গিরির 'দ্বন্দ্ব' চর্চায় রইল।
বুধবার দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দু’জনেই যে সচেতন ভাবে মুখোমুখি সাক্ষাৎ এড়িয়ে গিয়েছেন, তা নজর এড়ায়নি দলের অন্য নেতা-কর্মীদের।রামনগরের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অখিল গিরি এবং পটাশপুরের বিধায়ক তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক এ দিন একাধিক দলীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলেও পরস্পরের সংস্পর্শ বাঁচিয়ে চলেছেন। বিধানসভা ভোটের আগে জেলায় দুই বিধায়কের এ হেন সম্পর্ক দলের পক্ষে ভাল নয় বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেকেই।
বুধবার ছিল শাসকদলের ২৮ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এ দিন কাঁথি শহরের আট নম্বর ওয়ার্ডের অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে হাজির ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক এবং কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান তথা অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরি। প্রকাশ্যে কেউ কারও সঙ্গে কথাবার্তা না বললেও একসঙ্গে কেক কাটেন উত্তম আর সুপ্রকাশ। কিন্তু দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দিনভর অখিল গিরির সাক্ষাৎ এড়িয়ে যান উত্তম।
এ দিন সকালে কাঁথি-১ ব্লকের মহিষাগোটে ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। সেখানে অখিল ও তাঁর অনুগামীরা হাজির ছিলেন। প্রায় একই সময়ে কিছুটা দূরে কাপাসদা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়। সেখানে হাজির ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক এবং তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পীযুষ কান্তি পণ্ডা। শুধু তাই নয়, এ দিন সকালে কাঁথি শহরের ক্যানেল পাড়ে অটো ইউনিয়নের উদ্যোগে দলের পতাকা উত্তোলন করেন উত্তম। সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তমালতরু দাস মহাপাত্র। ঠিক তার ধারেই মঙ্গলবার গভীর রাতে ওয়ার্ড তৃণমূলের উদ্যোগে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সুপ্রকাশ। হাজির ছিলেন পুরসভার একাধিক পুর প্রতিনিধি। একই রকম ভাবে কাঁথি শহরের ক্যালট্যাক্সে তৃণমূলের পতাকা উত্তোলন করেন রামনগরের বিধায়ক অখিল। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মঙ্গলবার গভীর রাতে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনে হাজির ছিলেন উত্তম।
প্রসঙ্গত, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় তৃণমূলে ঐক্য ফেরানোই এখন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে চ্যালেঞ্জ। কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনকে সামনে রেখে সেটা শুরু করেছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। তবে ইংরেজি বছরের প্রথম দিনে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে উত্তম এবং অখিলের কর্মকাণ্ডে দুই শিবিরের 'দ্বন্দ্ব' নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ফের চর্চা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে শাসক দলকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন,"দলের প্রতিষ্ঠা দিবস আলাদা ভাবে পালিত হয়, এটা তৃণমূল বলেই সম্ভব। আসলে পিসি আর ভাইপোর মধ্যে যে লড়াই চলছে তার জের জেলাতেও ছড়িয়েছে। এক জন আর এক জনের মুখ দেখতে রাজি নন।’’ প্রসঙ্গত, অখিল মূলত মমতা শিবিরের নেতা এবং উত্তম অভিষেক শিবিরের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত।
অখিল এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি বলছেন,"দলের প্রতিষ্ঠা দিবস। তাই দলের নেতারা প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেছেন। এটা নিয়ে কিছু বলার নেই।" উত্তম বলেছেন,"কাঁথি পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের একটি অনুষ্ঠানে আমি এবং সুপ্রকাশ একসঙ্গেই ছিলাম।" কিন্তু অখিলের সঙ্গে এক মঞ্চে তাঁকে দেখা যায়নি কেন? উত্তমের জবাব,"এত জায়গায় কর্মসূচি চলেছে। সব জায়গায় সকলের পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে আমরা ঐক্যবদ্ধ।’’