— প্রতীকী চিত্র।
সচেতনতা প্রচারই সার! কিন্তু জেলায় রাশ নেই কুষ্ঠ রোগে। জানা গিয়েছে, কার্যত নিয়মিত নতুন কুষ্ঠ রোগীর খোঁজ মিলছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। বছরে পাঁচশোরও বেশি কুষ্ঠ রোগীর খোঁজ মিলছে। ২০২৩ সালে জেলায় নতুন করে ৫১২ জন কুষ্ঠ রোগীর খোঁজ মিলেছিল। এরপর ২০২৪ সালে নভেম্বর পর্যন্তই জেলায় নতুন করে ৫৩৬ জন কুষ্ঠ রোগীর খোঁজ মিলেছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের দাবি, কুষ্ঠ রোগীরা চিকিৎসাধীন। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু এখনও নতুন রোগীর খোঁজ মিলতে থাকায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জেলার কয়েকটি ব্লকে এবং একাধিক শহরে তুলনায় কুষ্ঠ রোগীরসংখ্যা বেশি।
২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় নতুন করে যে ৫৩৬ জন কুষ্ঠ রোগীর খোঁজ মিলেছে, তাঁদের মধ্যে পুরুষ ৩৮০ জন, মহিলা ১৫৬ জন। ওই সংখ্যক কুষ্ঠ রোগীর মধ্যে ২৬ জন শিশুও রয়েছে। অন্য দিকে, ওই ৫৩৬ জনের মধ্যে স্বল্প জীবাণু আক্রান্ত ১৭৪ জন, বহু জীবাণু আক্রান্ত ৩২৬ জন। এ ব্যাপারে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘রোগ চিহ্নিতকরণে এখন বেশি শিবির হয়। শিবিরে রোগী শনাক্তকরণ হয়। তাই নতুন রোগীর খোঁজ মিলছে।’’
একাধিক মহলের মতে, জেলায় যে হারে নতুন কুষ্ঠ রোগী মিলছে এবং যে ভাবে দেহে বিকৃতিযুক্ত লোকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অবিলম্বে কুষ্ঠ সমীক্ষার কাজ শুরু না করলে বিপদ বাড়তে পারে। কারণ, চিকিৎসায় দেরি হলে দেহে চিরস্থায়ী বিকৃতি হয়ে মানুষ পঙ্গু হয়ে যান। তখন পুনর্বাসন দুষ্করহয়ে ওঠে।
জেলার এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা কমছে না। বিষয়টি উদ্বেগেরই।’’ ২০০২ সালের তথ্য বলছে, জেলায় তখন চিকিৎসাধীন কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা ছিল ৪,৩৫৪। এর মধ্যে স্বল্প জীবাণু (পিবি) আক্রান্ত ২,২০৮ জন, বহু জীবাণু (এমবি) আক্রান্ত ২,১৪৬ জন। ওই সময়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যায় কুষ্ঠ রোগী ছিলেন আটজন। পরে পরে প্রকোপ কমেছে। এই সময়ের মধ্যে কত রোগীর খোঁজ মিলেছে? জানা গিয়েছে, ২০০২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত জেলায় সবমিলিয়ে ৩০,৪৮৫ জন কুষ্ঠ রোগীর খোঁজ মিলেছে। অন্য দিকে, এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসায় সেরে গিয়েছেন ২৭,৪৮২ জন। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ, এখন জেলায় প্রতি ১০ হাজারে কুষ্ঠ রোগীর সংখ্যা একজনেরও কম। হারটা ০.৬৭। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বেশ কিছু সংখ্যক বিকলাঙ্গ কুষ্ঠ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন অপারেশন হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজন রোগীকে এই পরিষেবা দেওয়া হবে।’’
কুষ্ঠ একটি জীবাণুবাহিত রোগ। মাইক্রো-ব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি নামক জীবাণুর দ্বারা এই রোগের সংক্রমণ ঘটে। এই রোগে ত্বক সাদা খসখসে হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আক্রান্ত রোগীর হাঁচি বা সর্দি-কাশির বা অন্য শ্বাসনালী-ক্ষরিত পদার্থের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। সংক্রমণ ঘটলে প্রথমে চামড়ায় তার প্রভাব দেখা যায়।
মেদিনীপুরের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘প্রথম প্রথম শুধু দাগ ছাড়া কোনও অসুবিধা না থাকায় বা সচেতনতার অভাবে রোগী চিহ্নিত করে তাঁকে চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা যথেষ্ট সমস্যার। কেউ কেউ আবার জেনেও লোকলজ্জার ভয়ে চিকিৎসা এড়িয়ে যান।’’ অথচ, কুষ্ঠ রোগ চিকিৎসা করে সারিয়েতোলা সম্ভব।
বস্তুত, কুষ্ঠ দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে ধরে নিয়ে এক সময়ে জাতীয় কুষ্ঠ নিবারণ কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু বহু আক্রান্ত ওষুধের ‘কোর্স’ শেষ না করায় দেশের বিভিন্ন অংশে রোগটি ফিরে আসে। পরিস্থিতি দেখে ফের সক্রিয় করে তোলা হয় জাতীয় কুষ্ঠ নিবারণ কর্মসূচিকে। দেশে কুষ্ঠ রোগী বেশি পাওয়া যায়, এমন অঞ্চলগুলি বাছাই করে সেখানে নতুন রোগী খুঁজে বার করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে।
এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের ন’টি জেলাকে বাছা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরও। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, ‘‘কুষ্ঠ নিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।’’