রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ স্থানীয়দের। —নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হলেই দুর্ভোগ! জলবন্দি হয়ে পড়েন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের পালপাড়া, গোনাড়া, চিস্তিরপুরভেড়ি এলাকার ১৪টি গ্রামের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ। ফি বছর বন্যায় ঘরবন্দি হওয়াই যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত চার দশকের ওই জলযন্ত্রণার ব্যতিক্রম হয়নি এ বারও। মাঠের ধান ঘরে তোলার সম্ভাবনাও প্রায় নেই। এই অবস্থায় সোমবার প্রায় ৫ ঘণ্টা এগরা-বাজকুল রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যানজট হয় তীব্র। অভিযোগ, সমস্যা নিয়ে বার বার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু টনক নড়েনি কারও। তবে কয়েক ঘণ্টার অবরোধের পর আশ্বাস মিলেছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে সমস্যার সুরাহা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পটাশপুরের পানিনালা এলাকায় খাল সংস্কার না-হওয়ার কারণে প্রতি বছর বর্ষার মরসুমে সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। নিম্নচাপের বৃষ্টিতেও একই অবস্থা হয়। দীর্ঘ দুর্ভোগ পোহাতে পোহাতে এ বার মিলিত ভাবে প্রতিবাদ শুরু করেছেন তাঁরা। সোমবার সকাল ৭টা নাগাদ পালপাড়ার জোড়া কালীমন্দির প্রাঙ্গণে পথ অবরোধ শুরু করেন স্থানীয়েরা। নাকাল হতে হয় অফিসযাত্রী থেকে ছাত্রছাত্রীদের। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কয়েক ঘণ্টার জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার দু’দিকে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে একের পর এক ছোট এবং বড় গাড়ি। পটাশপুর থানার পুলিশ গিয়েও বিক্ষোভকারীদের টলাতে পারেনি। প্রায় ৫ ঘণ্টা এমন পরিস্থিতির পর ঘটনাস্থলে যান ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরে অবরোধ উঠে যায়।
পানিনালা খাল সংস্কার কমিটির সভাপতি পরেশ আদক বলেন, “প্রতি বছর এই এলাকার প্রায় ৪ হাজার একর চাষের জমি বৃষ্টির জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফি বছর বন্যা লেগে থাকে। অবৈধ ভাবে মাছের ভেড়ি তৈরি হয়েছে। তার উপরে খাল সংস্কার না হওয়ায় দুর্বিষহ হয় উঠেছে অবস্থা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বছরের পর বছর প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করেও কোনও কাজ হয়নি। তারই প্রতিবাদ হয়েছে।’’
প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে পানিনালা খাল পূর্ণ সংস্কার করতে হবে। মাঠে জমে থাকা জল দ্রুত বার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু দিনের মধ্যে বোরো ধানের চাষ রয়েছে। তাতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তারও ব্যবস্থা করে দিতে হবে প্রশাসনকে। না-হলে ‘বৃহত্তর আন্দোলন’-এর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাসিন্দারা।