R G Kar Hospital Incident

‘উদয়ন পণ্ডিত’দের জনতার কুর্নিশ

শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হারের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২৭
Share:

আর জি করের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে তমলুকে প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ভূলুন্ঠিত শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি অনেকটাই ফেরানো সম্ভব হয়েছে আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সামগ্রিক ভাবে সেই আন্দোলনে শিক্ষকদের বিশাল সংখ্যায় যোগদান এবং আন্দোলনরত পড়ুয়াদের পিছনে থেকে সমর্থন করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পথ দেখানোর প্রয়াস প্রশংসা ও বাহবা কুড়িয়েছে আমজনতার।

Advertisement

বিশেষ করে সরকারি স্কুলে কাজ করা সত্ত্বেও চাকরির পরোয়া না করে এই জেলা তথা গোটা রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা যে ভাবে প্রতিবাদ-আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন, তাতে তাঁদের হারানো সম্মান অনেকাংশ পুনরুদ্ধার হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, সরকারি স্কুলের শিক্ষক বা শিক্ষিকা পড়ুয়াদের প্রতিবাদ জানাতে অনুপ্রাণিত করছেন, সাহস জোগাচ্ছেন। ‘হীরক রাজার দেশে’র উদয়ন পণ্ডিতের সঙ্গে তাঁদের তুলনা করে কুর্নিশ জানিয়েছে জনতা।

শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপুর এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হারের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে। আবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এই জেলাতেই সবথেকে বেশি ভুয়ো শিক্ষকের হদিস মিলেছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত সকলেই চাকরি করছেন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আসার পরেই এক ধাক্কায় শিক্ষক সমাজ সামগ্রিক ভাবে তার সম্মানের আসন থেকে পতিত হয়। তাঁদের প্রতি তৈরি হয় অবিশ্বাস, নষ্ট হয় শ্রদ্ধা। রাস্তাঘাট, বাজার হাটে কটূক্তির শিকার হতে হয় শিক্ষকদের। এক কথায়, গোটা শিক্ষক সমাজ একটা বড়সড় প্রশ্ন চিহ্নের সামনে এসে দাঁড়ায়।

Advertisement

পরিস্থিতিটা বদলে যায় আর জি কর কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে পথে নামে শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক সমাজের এই আগুয়ান ভূমিকায় তাঁদের প্রতি তৈরি হওয়া সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন অরাজনৈতিক মঞ্চের কর্মসূচিতেও শিক্ষক সমাজের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহু শিক্ষক নিজের এলাকায় স্থানীয়দের নিয়ে গড়ে তুলেছেন প্রতিবাদ।

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সম্প্রতি মৌন মিছিল করে কোলাঘাটের দেড়িয়াচক শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামঠ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টারর্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস'-এর তমলুক মহকুমা সম্পাদক নির্মলেন্দু ঘড়া বলেন, ‘‘শিক্ষকরা পড়ুয়াদের অন্যায় না করা এবং না সহার শিক্ষা দেন। আর জি করের ঘটনায় সেই শিক্ষাই তাঁরা হাতেকলমে প্রয়োগ করছেন। আমরা পথে নেমেছি।’’

পাঁশকুড়ার শ্যামসুন্দরপুর পাটনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৃণালসুন্দর পাত্র আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে গড়ে তুলেছেন একটি অরাজনৈতিক মঞ্চ। সেই মঞ্চের উদ্যোগে পাঁশকুড়ার মাইশোরা এলাকায় একাধিক প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়েছে। মৃণালসুন্দর বলেন,"শিক্ষকরা যদি সমাজ গড়ার প্রকৃত কারিগর হন তা হলে এই সময় সবার আগে তাঁদের পথে নামা উচিত। আর সেটাই করছেন শিক্ষকরা।’’

সম্প্রতি হাওড়া তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতির মিনিট পাঁচেকের একটি বক্তব্য সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের যে কোনও নির্যাতনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। মোনালিসা এর আগে নন্দীগ্রামের ব্রজমোহন তিওয়ারি গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। প্রতিবাদী চরিত্রের মোনালিসা বলছেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতির ফলে শিক্ষকদের শ্রদ্ধার জায়গার সাময়িক অবনমন হয়েছিল। তবে একে আমি কখনওই সার্বিক বলব না। আর জি কর কাণ্ডকে কেন্দ্র করে এখন সমাজকে শোধন করার যে মন্থন চলছে সেখানে শিক্ষকেরা স্বাভাবিক ভাবেই যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা এই সময়ে ঘরে বসে থাকতে পারেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement