তৈরি হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের লঞ্চিং প্যাড। —নিজস্ব চিত্র।
ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে বিকট শব্দ ঘিরে রবিবার তোলপাড় হয়েছে কাঁথির জুনপুট। চলেছে থানা ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ। ওই শব্দের উৎসের সন্ধান মিললেও চব্বিশ ঘণ্টা পরেও থমথমে জুনপুট এলাকা। এরই মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে তৎপরতা শুরু হয়েছে এলাকায়। কোথাও নাগরিক কনভেনশন, আবার কোথাও সমাবেশের প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে সোমবার।
জেলা পুলিশের প্রশিক্ষণ শিবির থেকে বিকট শব্দ শোনা গিয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারা মৎস্যজীবীদের সাফ জানিয়েছে ওই শব্দের সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও যোগ নেই। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র এলাকায় চালু করতে দেওয়া যাবে না বলে সুর চড়াচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। এ দিন বিকেলে কাঁথি শহরে ‘ব্রেক থ্রু সায়েন্স’ নামে একটি সংস্থার পক্ষ থেকে নাগরিক কনভেনশন আয়োজন করা হয়। সেখানে নানা স্তরের মানুষ অংশ নেন। গড়ে তোলা হয় ‘জুনপুটে মিসাইল ও হরিপুরের পরমাণু চুল্লি বিরোধী গণ প্রতিরোধ মঞ্চ’। আগামী দিনে আন্দোলন কোনও পথে এগোবে, তার রূপরেখা ঠিক করতে ন’জনের আহ্বায়ক ঠিক করে একটি কমিটিও এ দিন তৈরি করা হয়।
কনভেনশনে আশঙ্কা প্রকাশ করে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির সদস্য তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ধ্রবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পাশাপাশি, গোটা এলাকা ধীরে ধীরে সামরিক বাহিনীর অধীনে চলে যেতে পারে। এর ফলে মৎস্যজীবী এবং স্থানীয় এলাকার মানুষজনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে।’’ একই সঙ্গে তিনি এ-ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, মৎস্যজীবীদের অন্য জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে যে সংস্কৃতি রয়েছে, তা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দিনের কনভেনশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সাধারণ মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়ে তোলার বিরুদ্ধে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে দাবিপত্র দেওয়া হবে।
আলাদা করে আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের নেতা আমিন সোহেল। এ দিন স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে তাঁরা জুনপুট ভূমি রক্ষা প্রতিরোধ কমিটি নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি বড় আকারের প্রতিবাদ সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।তাঁদের জীবন জীবিকার কথা না ভেবে কীভাবে জনবহুল জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের জন্য জমি দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মৎস্যজীবীরা। কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সভাপতি দেবব্রত খুটিয়া বলছেন, ‘‘মৎস্যজীবীদের জীবন জীবিকার কথা না ভেবেই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের জন্য জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার। সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন। অথচ মৎস্যজীবীদের কে সম্পূর্ণ আড়ালে রাখা হয়েছে। তাই আমরা যে কোনও সংগঠনের নেতৃত্বে আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছি।’’