Jharkhand Anushilan Party

স্বশাসনের দাবিতে ‘জোট’ ঝাড়খণ্ডীদের

লোকসভা ভোটের ফলাফলে রাজ্যে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া লোকসভা আসন তিনটি এবার বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ০৮:২০
Share:

জঙ্গলমহলের স্বশাসনের দাবি নিয়ে ঝাড়গ্রামে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। রবিবার ঝাড়গ্রামের একটি ধর্মশালায়।   নিজস্ব চিত্র।

লোকসভা ভোট মিটতেই জঙ্গলমহলের স্বশাসনের দাবি নিয়ে একজোট হচ্ছে ঝাড়খণ্ডীরা। বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে জোরাল ভাবে পেশ করা হবে স্বশাসনের দাবি।

Advertisement

সূত্রের খবর, স্বশাসনের দাবি নিয়ে অগ্রবর্তী ভূমিকা নিয়েছে আদিত্য কিস্কুর নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি (জেএপি)। রবিবার ঝাড়গ্রাম শহরের একটি ধর্মশালায় জেএপি-র কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হয়েছে। ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চার (জেএমএম) প্রাক্তন ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সনাতন হেমব্রমের সঙ্গে বেশ কয়েকজন জেএমএম সদস্য সম্প্রতি জেএপিতে যোগ দিয়েছেন। এ দিন তাঁরাও ছিলেন বৈঠকে। ওই বৈঠকে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অসিত খাটুয়ার নেতৃত্বে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়, জঙ্গলমহলের চার জেলাকে (বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর) নিয়ে ‘স্বশাসিত ঝাড়খণ্ড উপত্যকা পরিষদ’ গঠনের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু হবে। জঙ্গলমহলবাসীর সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে দার্জিলিংয়ের মডেলে ওই স্বশাসিত পরিষদ গঠন করতে হবে।

জেএপি-র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অসিত খাটুয়া জানান, তাঁরা সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত স্বশাসিত পরিষদ চান। অসিতের কথায়, ‘‘জঙ্গলমহলের চার জেলায় জনজাতি, তফসিলি, কুড়মি-সহ অনগ্রসর শ্রেণির বাস। যাঁদের অধিকাংশই ছোটনাগপুর মালভূমির ঝাড়খণ্ডী সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত। এলাকার উন্নয়ন, স্থানীয় বিভিন্ন ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে সরকারিস্তরে যা কাজ হয়েছে বা হচ্ছে তা যথোপযুক্ত নয়।’’ সেই কারণে নির্বাচিত স্বশাসিত পরিষদের মাধ্যমেই এলাকার মূলবাসীদের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করছেন অসিতরা। প্রসঙ্গত, অসিত এবং জেএপির কেন্দ্রীয় সভাপতি আদিত্য কিস্কু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আদিবাসী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদের সদস্য। পঞ্চায়েত ভোটের আগে পর্ষদের নতুন কমিটিতে তাঁদের সদস্য করা হয়। ওই পর্ষদের চেয়ারপার্সন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

লোকসভা ভোটের ফলাফলে রাজ্যে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া লোকসভা আসন তিনটি এবার বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তবে পুরুলিয়া ও বিষ্ণুপুর আসন দু’টি এ বারও ধরে রেখেছে বিজেপি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে অসিতরা স্বশাসিত ঝাড়খণ্ড উপত্যকা পরিষদের দাবি তুলছেন কেন? প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় জঙ্গলমহলের স্বশাসনের দাবি তুলেছিলেন অসিতরা। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম আসনের ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) প্রার্থী বিরবাহা হাঁসদাকে সমর্থন করেছিল ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি। ২০২১ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিধানসভা ভোটে লড়ে ঝাড়গ্রামের বিধায়ক হন বিরবাহা। মন্ত্রিত্বও পান। প্রশাসনে ও তৃণমূলের অন্দরে বিরবাহার ক্রমাগত উত্থানে শাসকদলের অন্দরেই চাপা ক্ষোভ রয়েছে। বিরবাহার মা ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদাও রাজনীতিতে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। এমন আবহে ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির আচমকা স্বশাসনের দাবি নিয়ে আন্দোলনে ঘোষণা করায় রাজনৈতিক মহলেও জল্পনা শুরু হয়েছে।

অসিত অবশ্য বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে আমরা আছি। তবে জঙ্গলমহলের মাটি, ভাষা ও সংস্কৃতি একেবারেই ভিন্ন। যা বঙ্গ সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে না। পাহাড়ের মত জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে স্বশাসন প্রয়োজন। সেই বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে দরবার করা হবে।’’ অসিত জানান, আগামী ৪ জুলাই ঝাড়গ্রামে জেএপি-র নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হবে। ওই দিন জেএপি-র কেন্দ্রীয় সভাপতি আদিত্য কিস্কুও উপস্থিত থাকবেন। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলছেন, ‘‘অন্য দলের কর্মসূচি নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তাঁরা দাবি পেশ করতেই পারেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement