Chatradhar Mahato

বিরসার জন্মদিনে সরকারি ছুটি চেয়ে সওয়াল ছত্রধরের 

গোয়েন্দা সূত্রেও খবর, বিধানসভা ভোটের আগে জাতিসত্ত্বার আন্দোলন অস্বস্তিতে ফেলতে পারে শাসকদলকে। এই পরিস্থিতিতে ছত্রধরকে সামনে রেখে তৃণমূল ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৯
Share:

ফাইল চিত্র।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের মুখ এখন ছত্রধর মাহাতো। রবিবার এক ভিডিয়ো বার্তায় সেই তিনিই বিরসা মুণ্ডার জন্মদিন উপলক্ষে সরকারি ছুটির দাবিতে সওয়াল করেছেন।

Advertisement

জঙ্গমহলে সম্প্রতি জাতিসত্ত্বার আন্দোলন মাথা চাড়া দিচ্ছে। কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্তি ও কুড়মালি ভাষার স্বীকৃতি-সহ বিভিন্ন দাবিতে ডিসেম্বরের গোড়ায় একযোগে আন্দোলনে নামছে একাধিক কুড়মি সামাজিক সংগঠন। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর নিজেও কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ। এমন প্রেক্ষিতে ছত্রধরের এই বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ বিরসা কুড়মি ছিলেন না। ছিলেন আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের মানুষ।

এর আগে কুড়মিদের করম পরবের সম্প্রদায়গত ছুটি (সেকশনাল হলিডে) নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিল রাজ্য সরকার। করম মূলত কুড়মিদের উৎসব হলেও সরকারি নির্দেশিকায় সেটি আদিবাসীদের ‘সেকশনাল হলিডে’ হিসেবে ছিল। অথচ কুড়মিরা আদিবাসী না হওয়ায় কুড়মি সম্প্রদায়ের সরকারি কর্মীরা ছুটির বাইরে থেকে যেতেন। ২০১৩ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এমন ভ্রান্তি হয়ে এসেছে। এ বার কুড়মি সংগঠন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়ায় শেষ মুহূর্তে বিজ্ঞপ্তি জারি করে করম পরবের ছুটি সর্বসাধারণের জন্য করা হয়।

Advertisement

সেই কথা মাথায় রেখেই বিরসার জন্মদিনে সাধারণ ছুটি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন ছত্রধর। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ওই মহলের মতে, মোক্ষম সময়ে মুন্ডা-আবেগ উস্কে দিয়ে পরোক্ষে জাতিসত্ত্বার আন্দোলনে নিজের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাকা করতে চাইছেন ছত্রধর। কারণ ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মতো এ রাজ্যেও স্বাধীনতা যোদ্ধা বিরসাকে উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হোক, মুন্ডাদের এ দাবি অনেক দিনের।

মুন্ডাদের মতো কুড়মিদের নিয়েও স্বস্তিতে নেই রাজ্যের শাসক দল। স্বাধীনতার আগে কুড়মিরা আদিবাসী থাকলেও স্বাধীনতার পরে অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত হয়ে গিয়েছেন (ওবিসি তালিকাভুক্ত)। তাঁরা এখন আদিবাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে চান। কুড়মি সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকার কুড়মিদের আদিবাসী প্রমাণের স্বপক্ষে কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সংশোধিত রিপোর্ট এখনও কেন্দ্র সরকারের কাছে পাঠায়নি। গোয়েন্দা সূত্রেও খবর, বিধানসভা ভোটের আগে জাতিসত্ত্বার আন্দোলন অস্বস্তিতে ফেলতে পারে শাসকদলকে। এই পরিস্থিতিতে ছত্রধরকে সামনে রেখে তৃণমূল ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলে’ নেমেছে বলেও মনে করছেন অনেকে। জেলা তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, ‘‘সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি ধরে রাখতে ছত্রধরের পূর্ব-অভিজ্ঞতা রয়েছে। এগারো বছর আগে জনসাধারণ কমিটির আন্দোলনে ছত্রধরের ছত্রছায়ায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ভূমিজ, কুড়মি, বাগদি, বাগাল, চাষার মতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একযোগে সামিল হয়েছিলেন। তাই জনজাতির সমস্যা মেটাতে কৌশলে তাঁকে সামনে এগিয়ে দিচ্ছে দল।’’

কেন এই ভিডিয়ো বার্তা? সেই প্রশ্নের উত্তরে ছত্রধর নিজে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, সিদো-কানহো, বিরসা মুন্ডা, রঘুনাথ মাহাতোরা আদিবাসী-মূলবাসী মানুষের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। সিদো-কানহো সাঁওতাল ও বিরসা মুন্ডা সম্প্রদায়ের। আর কুড়মি সম্প্রদায়ের রঘনাথ মাহাতো হলেন চুয়াড় বিদ্রোহের নেতা। তাঁর এই কথাতেই স্পষ্ট আপাতত জঙ্গলমহলে সম্প্রদায়গত সম্প্রীতি ধরে রাখাই তার পাখির চোখ।

১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে দলমা পাহাড় এলাকায় ইংরেজ পুলিশের গুলিতে নিহত রঘুনাথের নামে ঝাড়গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখার দাবিও করেছে কুড়মি সংগঠনগুলি। যদিও গত ৭ অক্টোবর ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি সাঁওতালি মহাকবি সাধু রামচাঁদ মুর্মুর নামে করা হবে। এই পরিস্থিতিতে ছত্রধরের আশ্বাস, ‘‘জঙ্গলমহলের সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সমান নজর রয়েছে। কুড়মিদের দাবিগুলি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement