শনিবার তমলুক আদালত চত্বরে প্রিয়ব্রত বক্সী (ডানদিকে)। পাশেই টাকা ফেরতের ফর্ম নিতে আমানতকারীদের লাইন। নিজস্ব চিত্র
ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার মামলায় প্রথম তদন্তকারী অফিসার। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই জারি হয়েছিল গ্রেফতারি পরোয়ানা। সেই পুলিশকর্তা প্রিয়ব্রত বক্সী শনিবার সাতসকালে তমলুক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তবে এ দিন আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন করা হয়নি। আগামিকাল, সোমবার ফের আদালতে হাজিরা দেবেন ওই পুলিশ কর্তা।
‘পিনকন’ সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক (তৃতীয়) মৌ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। মামলার তদন্তকারী অফিসার হিসাবে প্রিয়ব্রত আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পর পর চারবার তিনি সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি। এর পরে বিচারক গত ২৭ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। পাশাপাশি, প্রিয়ব্রতকে ১ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির করানোর জন্য পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকেও নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রিয়ব্রত বর্তমানে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও। এ দিন সকাল ১০টার মধ্যে তিনি পৌঁছে যান আদালত চত্বরে। ছিলেন পুলিশের উর্দিতেই। নিজের গাড়িতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রিয়ব্রত আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন দেহরক্ষী।
আইনজীবী সূত্রের খবর, আত্মসমপর্ণ করায় প্রিয়ব্রতকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আগের চারদিন তিনি কেন আসেননি, সেই সংক্রান্ত নথি জমা দেন বিচারকের কাছে। মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী সৌমেনকুমার দত্ত বলেন, ‘‘প্রিয়ব্রত এ দিন জামিনের আবেদন করেননি। বিচারক মৌ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে তিনি সাক্ষ্য দিয়েছেন। অভিযুক্তদের আইনজীবী তাঁকে জেরা করেছেন। এ দিন সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পূর্ণ না হওয়ায়, তাঁকে হেফাজতে রেখে আগামী সোমবার সাক্ষ্যগ্রহণের কথা জানান বিচারক। কিন্তু প্রিয়ব্রত বিচারকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেন যে, তিনি নিজ দ্বায়িত্বে সোমবার আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেবেন। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’’
আদালতে আগে হাজির না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে প্রিয়ব্রত জানিয়েছিলেন, তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং আইন শৃঙ্খলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এ দিন অবশ্য আদালত চত্বরে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রিয়ব্রত কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
বর্তমানে পিনকন মামলায় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আদালতে ফর্ম বিলির কাজ চলছে। সে জন্য বহু আমানতকারীই এ দিন মৌ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসের সামনে হাজির হয়েছিলেন। মামলার তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনে যে আলোড়ন পড়েছিল, তার সিকি ভাগও এ দিন দেখা যায়নি আদালতে হাজির আমানতকারীদের মধ্যে। এক আমানতকারীর কথায়, ‘‘কে গ্রেফতার হল জেনে কী হবে! আমরা লগ্নির টাকা ফেরত পাচ্ছি, এটাই বড় কথা।’’