১৮ ফেব্রুয়ারি খড়্গপুরে তৃণমূল লেবার সেলের সম্মেলনে শ্রীনুর সঙ্গে তারক ভট্টাচার্য। ফইল চিত্র।
সর্বক্ষণ ছোট্ট একটা গোপাল মূর্তি সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। চড়তেন সাদা রঙের দামি গাড়ি চড়তেন। তৃণমূল নেতা হিসেবে দাপটও কম ছিল না। তৃণমূলের লেবার সেলের রাজ্য চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত সেই তারক ভট্টাচার্যের হাতেই হাতকড়া পড়েছে শুক্রবার রাতে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খড়্গপুরের এই নেতা শহরের রামমন্দিরে রীতিমতো সম্মেলন করে লেবার সেলের জেলা কার্যকরী চেয়ারম্যান পদে বসিয়েছিলেন রেলমাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে। তারপরই এই গ্রেফতার।
খড়্গপুর শহরের তালবাগিচা রথতলা এলাকার বাসিন্দা ঊনষাট বছরের তারক সাতের দশকে কংগ্রেস করতেন। সেই সময়ে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অনুগামী ছিলেন তিনি। বছর কুড়ি আগে অবিভক্ত মেদিনীপুরে আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতিও হন। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দহরম-মহরম ছিল তাঁর। নিজেকে তৃণমূলের লেবার সেলের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিচ্ছিলেন। গত ১২ জানুয়ারি মেদিনীপুরে সেই সংগঠনের অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সে দিনও সঙ্গে ছিল শ্রীনু। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ফের খড়্গপুর রামমন্দিরে তৃণমূলের লেবার সেলের জেলা সম্মেলন করে তারক শ্রীনুকে পদ দেন। সে দিন উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পাল, বর্তমান পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, চিকিৎসক গোলক মাজি প্রমুখ। সম্প্রতি অবশ্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘লেবার সেল’ বলে কোনও সংগঠন নেই বলে দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তারক ভট্টাচার্য তাঁদের দলের বা শাখা সংগঠনের কেউ নন। তৃণমূলেরই একাংশ জানালেন, আগেও একবার প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তারক।
তারকের যেখানে বাড়ি, সেই তালবাগিচাতেই থাকেন জহরলাল পাল। রামমন্দিরের অনুষ্ঠানে তারকের সঙ্গে তাঁকে দেখা যাওয়া নিয়ে প্রাক্তন পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘আমাদের জোড়াফুলের ঝান্ডা থাকলে আমি সেখানে আমি যাই। আর লেবার সেল অবৈধ বলার পরে আমি ওঁর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখিনি।” সে দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বর্তমবান পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারেরও দাবি, “দলের পতাকা দেখে ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।”
সপ্তাহ দু’য়েক আগেই খড়্গপুর-১ ব্লকের গোপালিতে তৃণমূলের অঞ্চল সম্মেলনেও হাজির ছিলেন তারক। সেখানে তখন উপস্থিত তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, নির্মল ঘোষরা। এ দিন যদিও দীনেনবাবুর দাবি, “আমার কিছু জানা নেই।”
তৃণমূলেরই একাংশ জানাচ্ছেন, গত ২৪ জানুয়ারি খড়্গপুরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী তারকের বিরুদ্ধে প্রতারণার (চাকরির দেওয়ার নাম করে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া) অভিযোগ দায়েরের আগেই তাঁর বিরুদ্ধে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে অভিযোগ পৌঁছয়। এর পরেই তৃণমূলের শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় তারকবাবুকে দল বা শাখা সংগঠনের নেতা বলে অস্বীকার করেন। বিরোধীদের মতে, শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জটে জড়িয়েই গ্রেফতার হয়েছেন তারকবাবু। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, শ্রীনু নায়ডুর মতো রেলমাফিয়াকে পদে বসিয়েই ভুল করেছিলেন তারকবাবু। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলের কথায়, “গত পুরভোটে শ্রীনু নায়ডু, রামবাবুকে মাঠে নামিয়েছিল তৃণমূল। আমার মনে হয় এই গ্রেফতার তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।” শহরের কংগ্রেস নেতা রবিশঙ্কর পাণ্ডেও বলেন, “তৃণমূলে এখন দুষ্কৃতী, তোলাবাজদের ভিড়। তৃণমূলের লেবার সেলের অনুষ্ঠানে তো তৃণমূলের নেতা, পুরপ্রধান, প্রাক্তন পুরপ্রধান সকলকে দেখা গিয়েছে। তাই এখন দায় ঝাড়তে চাইলেও তৃণমূল দায় ঝাড়তে পারবে না।”