ঝাড়গ্রাম আদালতে ধৃত টিপু। ফাইল চিত্র
‘মাওবাদী তাত্ত্বিক নেতা’ টিপু সুলতান শুধু নন, আরও অনেকেই গণ-সংগঠনের আড়ালে জঙ্গলমহলে নতুন করে অতিবাম রাজনীতির জমি তৈরির চেষ্টা করছেন বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের। তাঁদের মতে, এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি বিগড়োতে পারে।
সম্প্রতি জঙ্গলমহলের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরকে এমনই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর। যদিও রাজ্য পুলিশের সূত্র জানাচ্ছে, গত এক দশক ধরে জঙ্গলমহলে নিরবিচ্ছিন্ন নজরদারি রয়েছে। কোনও রকম অসঙ্গতি নজরে এলেই পুলিশের তরফে অনুসন্ধান ও তদন্ত চালিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তাই জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। টিপু সুলতানের গ্রেফতার পুলিশের সক্রিয় পদক্ষেপেরই ফল। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘পুলিশ সব সময় সতর্ক রয়েছে। যে কোনও অশান্তির অপচেষ্টা কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে।’’
তবে পুলিশের একটি মহল মনে করছে, স্থানীয় জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে মাওবাদীরা হতাশ। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরের মতো গ্রামগুলি একসময়ে মাওবাদীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। এখন সেখানে বারো মাস দলে দলে পর্যটক যাচ্ছেন। পর্যটনের হাত ধরে স্থানীয় অর্থনীতি অনেকটাই চাঙ্গা হওয়ার মুখে। কাঁকড়াঝোর-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে একাধিক হোম স্টে। ফলে গণ সংগঠনকে হাতিয়ার করে জমি তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন কিছু লোকজন।
বছর ছাব্বিশের টিপু সুলতান ওরফে মুস্তাফা কামাল হলেন বীরভূমের বোলপুরের বাসিন্দা। ২০১৮ সালের নভেম্বরে মাওবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থানার পুলিশ প্রথমবার তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যান টিপু। বোলপুরে থাকাকালীন বিভিন্ন গণসংগঠনের হয়ে কাজ করছিলেন তিনি। যদিও পুলিশের দাবি, টিপু ভিন জেলায় বসে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের জমি পুনরুদ্ধারের জন্য গণ সংগঠনের আড়ালে কাজ করছিলেন। গত ১৩ অক্টোবর বোলপুর থেকে টিপুকে গ্রেফতার করে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে জেরা করে মাওবাদীদের আগামী রণকৌশল সম্পর্কে তথ্য মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। পুলিশ জেনেছে, শুধু টিপু নন, কলকাতা, হুগলি ও ভিন জেলার একাধিক ব্যক্তি গণসংগঠনের আড়ালে অতিবাম রাজনীতির বীজ নতুন করে জঙ্গলমহলের মাটিতে পোঁতার চেষ্টা করছেন এমনই কিছু ব্যক্তির তালিকা তৈরি করা গিয়েছে। ঝাড়গ্রামে কারা কারা মাওবাদীদের গণ সংগঠনের লোকজনকে এক সময়ে সাহায্য করেছিলেন তাঁদের সম্পর্কেও নতুন করে খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ।
টিপুর আইনজীবী কৌশিক সিংহ অবশ্য বলছেন, ‘‘টিপু একজন প্রতিবাদী যুবক। তিনি মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত নন।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাওবাদীদের নামে পোস্টার মিললেও সেগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের কোন্দলের ইঙ্গিতমাত্র। কয়েকটি ক্ষেত্রে মাওবাদীদের প্রাক্তন সহযোগীরা বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পোস্টার দিয়েছিলেন। মাওবাদীদের গণ সংগঠনগুলি ভিন্ জেলা থেকে জঙ্গলমহলে সংগঠন গড়ার ছক কষেছিল। বিষয়টি জানতে পেরেই পুলিশ আরও সক্রিয় ভাবে কাজ করছে।
চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের মতে, ‘‘মাওবাদীদের হাত ধরেই তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। যদি নতুন করে মাওবাদী প্রভাব বাড়ে সেটা তাহলে মাওবাদী-তৃণমূলের মধুচন্দ্রিমা অবসানের ফল।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা পাল্টা বলছেন, মানুষ আর ভুল পথে যাবেন না। বিরোধী রাজনৈতিক দল অপচেষ্টা করলেও মানুষ জবাব দেবেন।’’