—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
হোটেলের ঘরের ভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণের মতো চেনা অভিযোগ হামেশাই শোনা যায় সৈকত শহর দিঘায়। কিন্তু রাজ্যের অন্যতম এই জনপ্রিয় গন্তব্যস্থলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন গুরুতর অভিযোগ আগে ওঠেনি। দিঘায় সেই প্রশ্নই এবার উঠেছে গণধর্ষণের ঘটনার পরে। সৈকত শহরে আদৌও কি পর্যটকেরা এই ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা থেকে নিশ্চিন্ত থাকত পারেন! প্রশ্ন ঘুরছে অধিকাংশরই মনে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি দিঘায় এক মহিলা পর্যটককে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে দিঘা থানার পুলিশ। তারপরেও পর্যটকদের রাত্রিকালীন নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ওল্ড দিঘার এক হোটেল মালিকই জানাচ্ছেন, বহু পর্যটক সন্ধ্যের পরে ট্রেনে আসেন। স্টেশন থেকে দু’দিকে বেশ কিছুটা এলাকা প্রায় ফাঁকা। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনার পর মহিলা পর্যটকদের সুরক্ষার জন্য পুলিশি নিরাপত্তা সন্ধ্যয় আরও বাড়ানো দরকার।’’
সৈকত শহরের নিরাপত্তা সংক্রান্ত খোঁজখবর নিতে দেখা যাচ্ছে, দিঘার রাস্তাঘাট এবং সৈকত জুড়ে অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে সেগুলি লাগানো হয়েছিল। পর্ষদের একটি সূত্রের খবর, ২০২১ সালের মে মাসে ইয়াস ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল গোটা উপকূল। সে সময় সমুদ্র সৈকতের ধারে লাগানো সমস্ত সিসি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যায়। পরে পর্ষদের তরফে ওল্ড দিঘা থেকে পুলিশ হলিডে হোম পর্যন্ত ১৬ লক্ষের বেশি টাকা খরচে ফের ক্যামেরা বসানো হয়। কিন্তু সে সবও ফের খারাপ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
পর্ষদ সূত্রের খবরর, ক্যামেরা বসানোর দায়িত্ব যে ঠিকাদার সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল, তারা আর ক্যামেরা সারাতে চাইছেন না। পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এগজিকিউটিভ অফিসার তথা কাঁথির মহকুমাশাসক শৌভিক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি নজরে এসেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে সিসি ক্যামেরাগুলি সারাতে বলা হয়েছে। দ্রুত তারা না সারালে নতুন কোনও ঠিকাদার সংস্থা নিয়োগ করা হবে।
সৈকত শহরে আসা মহিলা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য গত বছর ডিসেম্বরে জেলা পুলিশের উদ্যোগে চালু হয়েছিল ‘উইনার্স টিম’। স্কুটিতে চেপে দুজন করে মহিলা পুলিশ সৈকতের নজর রাখবেন বলে ঠিক ছিল। মহিলা পর্যটকদের সমস্যা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন তাঁরা। ‘উইনার্স টিমে’র গতিবিধি সে রকম নজরে পড়ে না বলে দাবি পর্যটকদের এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত থেকে বেড়াতে আসা পারমিতা বিশ্বাস নামে এক মহিলা বলছেন, ‘‘বুধবার সন্ধ্যায় ওল্ড দিঘার ব্লু ভিউ ঘাটের কাছে দীর্ঘক্ষণ কাটিয়েছি। উইনার্স টিম কোথাও চোখে পড়েনি।’’ স্থানীয় দোকানদাররাও জানাচ্ছেন, পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ার সেভাবে দেখা গেলেও ‘উইনার্স টিম’কে দেখা যায় না।
প্রায় দেড় দশক আগে দিঘাতে এক পর্যটককে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। ফের এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন হোটেল মালিকেরা। হোটেল মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পর্যটকদের স্বার্থে পুলিশের পাশাপাশি, হোটেল মালিকেরাও যাতে নিরাপত্তার বিষয়ে যত্নবান হন, তা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’ সৈকতে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের ডেপুটি সুপার (ড্রাগ অ্যান্ড থেরাপিউটিক) আবুনুর হোসেন বলছেন, ‘‘উইনার্স টিম নিয়মিত কাজ করে। পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য আরও কী পদক্ষেপ করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’