সৌমেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ সংক্রান্ত যে মামলায় নাম জড়িয়ে ছিল বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীর, সেই মামলায় পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।
এই মামলার তদন্তে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসকের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেই হাই কোর্টের যান কাঁথির বাসিন্দা আবু সোহেল। মঙ্গলবার বিচারপতি শম্পা সরকার নির্দেশ দেন, কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজের তদন্ত নিয়ে নতুন কোনও মত আদালত দেবে না। জেলাশাসক কোন নির্দিষ্ট পথে তদন্ত করবেন তাও ঠিক করে দেবে না আদালত। আগের নির্দেশ মাফিক স্বচ্ছ এবং পদ্ধতিগতভাবে তদন্ত করবেন জেলাশাসক। এ জন্য ছ'সপ্তাহ সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন বিচারপতি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই কলেজে একাধিক ভবন নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে বলে তৎকালীন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বর্তমানে বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কাঁথি থানায় এফআইআর করেন আইনজীবী আবু সোহেল। সৌমেন্দু কলেজের সভাপতি থাকাকালীন ৬টি ভবন হয়েছিল। এর কোনওটির জন্য টেন্ডার হয়নি, নকশাও পাশ করানো হয়নি বলে দাবি। ঠিকাদার নিয়োগেও অস্বচ্ছতার অভিযোগ ছিল। পরে হাই কোর্টে মামলা করেন সোহেল।
গোড়ায় কিছুদিন তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট। তারপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ইতিপূর্বে বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছিলেন তদন্তকারীরা। বুধবার হাই কোর্টের নির্দেশ, এ বার জেলাশাসক তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন। এর আগে অভিযোগকারীর বক্তব্যের স্বপক্ষে কী প্রমাণ রয়েছে, নির্মাণের অডিট হয়েছে কিনা, ইউটিলাইজ়েশন শংসাপত্র রয়েছে কিনা, তাছাড়া রাজ্য সরকার বা সরকার ঘোষিত কোনও সংস্থার থেকে এই নির্মাণে কত টাকা মিলেছে, সেই সব নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। তৎকালীন এক অতিরিক্ত জেলা শাসকের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের কমিটি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয় জেলাশাসকের দফতরে।
ইতিমধ্যে এফআইআর খারিজের দাবিতে হাই কোর্টে মামলা করেন সৌমেন্দু। গত বছর ১৫ মার্চ সোহেলের সেই এফআইআর খারিজ করে দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তবে হাই কোর্টে জমা পড়া তদন্ত রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়। তখন আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছিল, কলেজের পরিচালন সমিতি বা সরকারি আধিকারিকদের কেউ এই দুর্নীতিতে জড়িত কিনা তা চিহ্নিত করতে আরও তদন্ত করতে হবে। তদন্ত শেষে জেলাশাসককে অভিযোগ জানাতে হবে। প্রয়োজনে জেলাশাসক কাঁথি থানা বা রাজ্য সরকারের অধীনস্থ আর্থিক দুর্নীতির তদন্তকারী সংস্থার সহযোগিতা নিতে পারেন। তারপরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা যাবে।
তারপরেও জেলাশাসক কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ। এর বিরুদ্ধেই মামলা করেছিলেন সোহেল। এখন হাই কোর্টের নির্দেশের পরে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে পেলে যা বলার বলতে পারব।’’
কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর আইনজীবী বিল্বদ্বল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সৌমেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও লোকাস দেখাতে পারেননি মামলাকারী।’’ তবে মামলাকারী আইনজীবী আবু সোহেলের বক্তব্য, ‘‘পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে আমার মামলা খারিজ হয়ে গেলেও প্রশাসনিক তদন্ত থেকে পরিচালন কমিটির কোনও পদাধিকারী বাদ যেতে পারেন না।’’