কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, আইনানুযায়ী (পঞ্চায়েতের) নির্ধারিত সময়ের (স্টিপুলেটেড টাইম) মধ্যেই কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। খড়্গপুর মহকুমা প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাতে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন হবে। দুপুর বারোটায় সময় বোর্ড গঠনের জন্য ইতিমধ্যেই জয়ী পঞ্চায়েত সদস্যের চিঠি পাঠাচ্ছে প্রশাসন। বৈঠকের শুরু থেকে শেষ, সমস্তটার ভিডিয়োগ্রাফি হবে। সেই প্রস্তুতি সারা হচ্ছে। ভিডিয়োগ্রাফি করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টই। সেই মতোই ওই প্রস্তুতি সারা হচ্ছে।
গত ১০ অগস্ট এই সমিতির বোর্ড গঠন হওয়ার কথা ছিল। সভা ডাকা হয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, বোর্ড গঠনের সভা শুরুও হয়েছিল। মাঝপথে ওই সভা স্থগিত হয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এর পিছনে রয়েছে দলের গোষ্ঠী কোন্দলই। সূত্রের খবর, দলের কে সভাপতি, সহ সভাপতি হবেন, সে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে দ্বন্দ্ব ছিল। এ বার সমিতির ২৭টি আসনের মধ্যে ২৩টি পেয়েছে তৃণমূল, ৪টি পেয়েছে বিজেপি। এ বারও তৃণমূলের সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পড়েছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব, জেলা নেতৃত্বও। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে মামলাও হয় কলকাতা হাই কোর্টে। মামলা ঠুকে দেন সমিতির ১৫ জন তৃণমূল সদস্য। এখানে সমিতির ২৭ জন সদস্যের মধ্যে তৃণমূলেরই ২৩ জন। তবে তৃণমূল সদস্যদের মধ্যে ‘আড়াআড়ি’ বিভাজন রয়েছে। একদিকে ১৫ জন, আরেকদিকে ৮ জন। জানা গিয়েছে, তৃণমূলের একপক্ষ চেয়েছিল, সমিতির সভাপতি হন ফটিক পাহাড়ি। আরেকপক্ষ চেয়েছিল সভাপতি হন উত্তম শীট। জেলা নেতৃত্বের ‘হুইপ’ ছিল উত্তমকে সভাপতি করার। দলেরই একাংশ সেই ‘হুইপ’ মানেননি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে, এর পরপরই ফটিকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা তৃণমূল। তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সুবিচার চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তৃণমূলের ১৫ জন জয়ী প্রার্থী। এঁদের মধ্যে ছিলেন ফটিকও।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, ১০ অগস্ট সমিতির বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়া কিছুটা এগিয়েও ছিল। মাঝপথে সভা স্থগিত করতে হয়েছিল। ওই সূত্রের দাবি, বোর্ড গঠনের জন্য সময় নির্দিষ্ট থাকে। তার মধ্যে ‘কোরাম’ হতে হয়। ওই দিন এখানে ‘কোরাম’ হয়ে গিয়েছিল। ২৭ জনের মধ্যে ২৪ জন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, মোট সদস্যের তিনভাগের একভাগ উপস্থিত থাকলে তবেই ‘কোরাম’ হয়। না- হলে নয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ‘কোরাম’ হওয়ার পাশাপাশি, উপস্থিত সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করানোও হয়েছিল। গোল বেঁধেছিল সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচনের আগে আগে। একাংশ সদস্য সভাস্থল ছেড়ে
বেরিয়ে গিয়েছিলেন।
হাই কোর্টের নির্দেশ, সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচন যেদিন হবে, সেদিন সমিতি চত্বরে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হবে। পুলিশ নিশ্চিত করছে, সমিতির বোর্ড গঠনের সভার দিন কেশিয়াড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা পর্যাপ্তই থাকবে। ফের কোন্দল প্রকাশ্যে আসবে? তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার দাবি, কেশিয়াড়িতে দলের মধ্যে আর ভুল বোঝাবুঝি নেই। কেশিয়াড়ির বিধায়ক পরেশ মুর্মু বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে বোঝাব যাতে নির্বিঘ্নে, গোলমাল ছাড়াই বোর্ড গঠন করা যায়। কিন্তু সবাইকে দলের শৃঙ্খলা মেনে
চলতে হবে।’’
নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের জন্যও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। শুক্রবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রশাসন। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জয়ী সদস্যদের চিঠি পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে। নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতির আটচল্লিশটি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৪৬টিতে, বিজেপি জেতে ২টিতে। গত ১০ অগস্ট সমিতির বোর্ড গঠনের দিন তৃণমূলের জয়ী সদস্যরা ব্লক অফিসে উপস্থিত না হওয়ায় বোর্ড গঠন স্থগিত করে প্রশাসন। দলীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি হিসেবে রাজ্যের পাঠানো নাম ব্লক তৃণমূল মানতে পারেনি। ফলে কেউই বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশ নেননি। সহ সভাপতি হিসেবে রাজ্য নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার জানার নাম পাঠিয়েছিল। তাতে আপত্তি ছিল ব্লকের। এই পদে ব্লক চেয়েছিল প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মিহির চন্দকে।