দীপক মাইতি। —নিজস্ব চিত্র
দুষ্কৃতী তাণ্ডব ক্রমশ বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুরে। শনিবার কাপাসবেড়িয়ায় ডাকাতির পর রবিবার ফের আক্রান্ত হলেন এক ব্যবসায়ী। অভিযোগ ওই সন্ধ্যায় পটাশপুরের জুনপুকুর এলাকায় চলন্ত মোটর বাইকে ওই ব্যবসায়ীর মাথায় আঘাত করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে তিন দুষ্কৃতী। কিন্তু ব্যবসায়ীর সাহসিকতায় রক্ষা পেয়েছে তাঁর দু’লক্ষ টাকা। তবে গুরুতর জখম হয়েছেন তিনি। তাঁর মাথায় একাধিক সেলাই পড়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বিস্কুট কোম্পানির হয়ে সরবরাহের কারবার করেন পটাশপুর থানার খড়াই-রাউতাড়া গ্রামের বাসিন্দা দীপক মাইতি। ভগবানপুর ও পটাশপুর এলাকার বিভিন্ন দোকানে বিস্কুট সরবরাহের ব্যবসা তাঁর। রবিবার প্রায় ২ লক্ষ টাকা আদায় করে বাড়ি ফিরছিলেন নিজের মোটর বাইকে। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পটাশপুর বাজারে একটি দোকানে পান খান। তারপর বাজকুল-এগরা সড়ক ধরেন।
তাঁর অভিযোগ, জুনপুকুর রাইসমিলের কাছে পিছন থেকে আসা অন্য একটি মোটর বাইক থেকে কেউ তাঁর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে। তারপর এগিয়ে গিয়ে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে পড়ে ওই মোটর বাইকটি। দীপকবাবু বলেন, ‘‘ওই বাইকে আলো জ্বলছিল না। ওরা বোধহয় ভেবেছিল মাথায় আঘাত লেগে আমি পড়ে যাব আর ওরা ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেবে। কিন্তু যন্ত্রণা নিয়েও আমি খুব জোরে বাইক চালিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছি। সে সময় অন্য গাড়ির আলোয় দেখেছি ওরা তিনজন ছিল।’’ ততক্ষণে মাথা থেকে রক্ত গড়াতে শুরু করেছে। কয়েকশো মিটার এগিয়ে জুনপুকুর বাজারের কাছে একটি দোকানের সামনে এসে পড়ে যান দীপকবাবু, লোক জড়ো হয়ে যাওয়ায় পালিয়ে যায় ওই তিন দুষ্কৃতী।
স্থানীয়রাই দীপকবাবুকে এগরা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর মাথার ডানদিকে হাতু়ড়ি জাতীয় কোনও কিছুর আঘাতে লেগেছিল। সেলাই পড়েছে বেশ কয়েকটি। এ ভাবে মোটর বাইকে চড়ে এসে অন্য বাইক আরোহীকে আক্রমণ করে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। গত সপ্তাহেই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে ঠিক এ ভাবেই আক্রান্ত হয়েছিলেন এক মহিলা। ছিনতাই হয়েছিল তাঁর লাখ খানেক টাকা।
বার বার এমন দুঃসাহসিক চুরি-ডাকাতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুলিশ-প্রশাসনও। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘পটাশপুরে ব্যবসায়ীর উপর আক্রমণের ঘটনা খুবই গুরুতর। প্রাথমিক ভাবে অনুমান টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশেই এই আক্রমণ। তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
সোমবার দীপকবাবু বলেন, ‘‘মাথায় মারার পর ওরা ওৎ পেতে ছিল। আবার আক্রমণ করত আমাকে। মাথা ফেটে যাওয়ার পরও বাইকটা চালাতে পেরেছিলাম, তাই বেঁচে গিয়েছি। না-হলে হয়তো আমাকে মেরেই ওরা টাকা নিয়ে নিত।’’ কিন্তু গোটা ঘটনায় অবাকও হয়েছেন দীপকবাবু। তিনি জানান, ১৬ বছর ধরে ওই রাস্তায় যাতায়াত করছেন তিনি। এমন ঘটনা ঘটতে পারে ভাবেননি কখনও। তবে বাস্তব বলছে অন্য কথা। ইদানীং এই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। দু’সপ্তাহ আগেই পটাশপুর বাজারের এক ব্যবসায়ী রাতে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর উপর চড়াও হয়েছিল দুষ্কৃতীরা।