—প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত স্তরে টক্কর হয়েছে জোরদার। পঞ্চায়েত সমিতিতে সেই দাপট কমলেও পূর্ব মেদিনীপুরের দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি হয়েছে ‘টাই’। ওই দুই সমিতি এবং পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে মরিয়া শাসক-বিরোধী উভয় পক্ষ। জয়ী দলীয় নেতৃত্ব যাতে টাকার বিনিময়ে ‘বিকিয়ে’ না যান, সে জন্য পদক্ষপে করছে তারা। ইতিমধ্যেই বিজেপির একাধিক নেতৃত্ব এলাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১৯টি তৃণমূল এবং চারটি বিজেপি পেয়েছে। বাকি দু’টি সমিতি নন্দীগ্রাম-১ এবং এগরা-২ এর ক্ষেত্রের উভয় দলই সমান সমান আসন পেয়েছে। এতেই নেতা ‘কেনা-বেচা’র পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নন্দীগ্রাম শুভেন্দুর বিধানসভা এলাকা। নন্দীগ্রাম-২ বিজেপি দখল করেছে। এমন আবহে নন্দীগ্রাম-১-ও তারা দখল করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে শেখ সুফিয়ান, বাপ্পাদিত্য গর্গের মতো তৃণমূল নেতা থাকলেও তাঁদের অনেককে নিয়েই দলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে। ওই কোন্দলকেই পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে বিজেপি হাতিয়ার করতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান।
নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠনে আশাবাদী বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মেঘনাদ পাল। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রতীকে জিতেছেন, এমন বহু প্রার্থী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে আমরা বোর্ড গড়ব।’’
এমন আবহে বৃহস্পতিবার রাতে হরিপুরে দলের কার্যালয়ে আসেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু। বিধায়ক মেঘনাদ-সহ একাধিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। দাবি, নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে রণনীতি ঠিক হয়েছে বৈঠকে। রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, ‘কেনাবেচা’র পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে নন্দীগ্রাম বিধায়কের। ২০১২ সালে বামেরা হলদিয়া পুরসভা ক্ষমতায় আসে। পরে একাধিক বাম কাউন্সিলর ভাঙিয়ে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। সেই সময় তৃণমূলে জেলার শেষ কথা ছিলেন শুভেন্দু। এ দিন বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কিছু ভাবতে হবে না। ছ’টা গ্রাম পঞ্চায়েত ক্লিয়ার আমার সঙ্গে রয়েছে। আরও দু’টি জিপি করব।’’
অন্যদিকে, আরেক সমিতি এগরা-২ নিয়ে আবার সাবধানী। শাসকদলের টাকার প্রলোভন এড়াতে এখানে বিজেপির জয়ী পঞ্চায়েত সমিতির চার জনকে ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনের মধ্যে গত পঞ্চায়েত একটিও পায়নি বিজেপি। এবারে সেখানে তারা ১২টি আসন পেয়েছে। ওই ১২ আসনের মধ্যে চার জনকে ভিন্ রাজ্যের হোটেলে রাখা হয়েছে। দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক তন্ময় হাজরা বলেন, ‘‘তৃণমূল বোর্ড গঠনে এখন থেকে আমাদের জয়ী সদস্যদের টাকার টোপ দিয়ে প্রলোভন দিচ্ছে। তাই আমাদের চার জনকে বাইরে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বোর্ড আমরাই গঠন করব।’’ যদিও বিজেপি সদস্যদের কেনার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
একই ছবি দেখা গিয়েছে পাঁশকুড়াতেও। পাঁশকুড়া-১ ব্লকে তৃণমূলের ফলাফল যথেষ্ট খারাপ। অভিযোগ, মাইশোরা, কেশাপাট এবং হাউর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যদের টাকার প্রলোভন ও ভয় দেখিয়ে তৃণমূলে যোগদান করানোর চেষ্টা চলছে। পঞ্চায়েত বোর্ড হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জয়ী বিজেপি সদস্যদের দিঘা, মন্দারমণি, কাঁথি ইত্যাদি এলাকায় সরিয়েছেন বিজেপি নেতারা। এলাকার বিজেপি নেতা প্রতীক পাখিরা বলেন, ‘‘তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুজিত রায় নিজের এলাকা মাইশোরায় আমরা জিতেছি। উনি টাকার টোপ এবং ভয় দেখিয়ে দলবদলের জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাই আমরা আমাদের জয়ী প্রার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছি।"