—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলাপরিষদে নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তৃণমূল। সেবার বিরোধীশূন্য হয়েছিল জেলাপরিষদ। জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির সবগুলিতে ও ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২২১ টিতেই নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছিল তৃণমূল।
এবার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের সেই ফলের ধারা অব্যাহত থাকে কিনা তা নিয়ে জেলার পাশাপাশি রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল রয়েছে। কারণ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলায় শাসক দলের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। জেলাকে বিরোধীশূন্য করার ক্ষেত্রে যিনি তখন বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেই শুভেন্দু এখন বিরোধী বিজেপিতে। এবার শাসক দলের অন্যতম প্রতিপক্ষ শুভেন্দুর নেতৃত্বাধীন বিজেপি।
বিরোধী বামেরাও এবার পঞ্চায়েত ভোটের লড়াইয়ে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও কৌতূহল রয়েছে। তাই আগামী ১১ জুলাই মঙ্গলবার ভোটের ফল প্রকাশের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা হিসেব নিকেশ কষতে শুরু করে দিয়েছেন। ভোটের সম্ভাব্য ফল তাঁদের পক্ষেই যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
শনিবার ভোটগ্রহণ ঘিরে নন্দীগ্রাম ও ময়নার বাকচা সহ জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই বিক্ষিপ্ত আকারে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ ময়নার বাকচা ও কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের একাধিক বুথ সহ জেলার মোট ৩১টি বুথে আজ, সোমবার পুনর্নির্বাচন হতে চলেছে। তবে গত শনিবার জেলায় ভোট গ্রহণের পরে শাসক দল তৃণমূল ও বিরোধী বিজেপি, বামফ্রন্ট সহ অন্যান্য দলের তরফে পঞ্চায়েতের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে নিজেদের সাফল্য দাবি করকতচে শুরু করেছে।
এবারের পঞ্চায়েতের নির্বাচনে জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ৪২৯০টি ও পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৬৬৫টি। জেলাপরিষদের আসন ৭০টি। গতবার জেলাপরিষদের ৬০টি আসনের সবকটিতে জিতেছিল শাসক তৃণমূল। এবার পঞ্চায়েত ভোটে জেলাপরিষদের আসন বেড়ে হয়েছে ৭০টি। এবারেও কি বিরোধীশূন্য হতে চলেছে জেলাপরিষদ কিংবা সব পঞ্চায়েত! পঞ্চায়েত সমিতিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তৃণমূল? তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘গতবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের সাথে আমি তুলনা করছি না। কারণ গতবার আমি জেলায় দলের দায়িত্বে ছিলাম না। তাই কী হয়েছে জানি না। তবে এবার নন্দীগ্রাম সহ সারা জেলায় আমাদের ভাল ফল হবে।’’
অন্যদিকে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের স্মৃতি মানুষ ভোলেনি। এ বারও তৃণমূল পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে পঞ্চায়েতের নির্বাচনে ছাপ্পা ভোট সহ নানা কারচুপি করার চেষ্টা করেছিল। তবে আমাদের জেলার বেশিরভাগ এলাকায় মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে তৃণমূলের ছাপ্পার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সেই কারণেই আমরা জেলার সমস্ত পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতে খুবই ভাল ফলের আশা করছি। জেলাপরিষদের সিংহভাগ আসনে জয়লাভ করব আমরা।’’
আরেক বিরোধী দল সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘এবার পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের ভোটপ্রাপ্তির হার আগের চেয়ে অনেকটা বৃদ্ধি পাবে। গতবারের চেয়ে অনেক ভাল ফল হবে। যদিও গতবার ভোট কেমন হয়েছিল তা সকলেই জানেন। এ বার আমরা মানুষের প্রতিরোধ দেখেছি। বেশ কিছু গ্রামপঞ্চায়েত ও জেলাপরিষদ আসনে আমরা জয়লাভ করব বলে আশাবাদী।’’