Suvendu Adhilari

নেতাই দিবসে তৃণমূলের লক্ষ্য সেই শুভেন্দু

শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপি নেতারাও নেতাইয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি নেতাই আন্দেলনেও এ বার ভাগ বসাতে চাইছে গেরুয়া শিবির!

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত 

লালগড় শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ ০২:০৮
Share:

তাইয়ে শহিদ বেদিতে শুভেন্দু অধিকারী (উপরে) ও মদন মিত্র। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নেতাই দিবস উপলক্ষে তৃণমূলের স্মরণসভা। অথচ সেই সভা জুড়ে থাকলেন সেই শুভেন্দু অধিকারী, যিনি আর তৃণমূলেই নেই!

Advertisement

তৃণমূলের শীর্ষনেতা, মন্ত্রীদের বক্তব্যে বৃহস্পতিবার আগাগোড়া ছিল শুভেন্দুর প্রতি কটাক্ষ। সকলেই বোঝাতে চাইলেন, নেতাইয়ের আন্দোলন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন। শুভেন্দু নেত্রীর দায়িত্বপ্রাপ্ত থেকে নিজেকে প্রচারের আলোয় এনে এখন কৃতিত্ব দাবি করছেন।

শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পরে এ বার নেতাই গ্রামের শহিদ বেদি স্থলে স্মরণসভা আগেই বাতিল করেছিল নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটি। তৃণমূলের তরফে নেতাই গ্রামের দু’কিমি আগে লালগড়ের হাটচালায় বাজার এলাকায় রাস্তার ধারে সভামঞ্চ করা হয়েছিল। দুপুর একটা নাগাদ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় নেতাইয়ে আসেন। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, মদন মিত্র, তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো-সহ দুই জেলার নেতা-নেত্রীরা। শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে শহিদ পরিবারের লোকজন ও আহতদের সাহায্য তুলে দেন পার্থ, মদনরা। মিনিট কুড়ি নেতাই গ্রামে ছিলেন পার্থ। পরে লালগড়ের হাটচালায় তৃণমূলের শহিদ স্মরণসভা হয়।

Advertisement

সেই সভায় ছত্রধরের বার্তা, ‘‘বালুভূমির শুভেন্দু আর লালমাটির দিলীপ ঘোষ বলছেস ওরা বাংলাটাকে মোদীর হাতে তুলে দেব। আমরা কি ছেড়ে দেব নাকি! বাংলাকে গুজরাত হতে দেব না।’’ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র শুভেন্দুকে ‘রাজাকার’ বলে কটাক্ষ করেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘আপনাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারের আলোয় আসতে সাহায্য করেছিলেন বলে তাই এত খ্যাতি, এত যশ, এত ব্যাপ্তি। সেই অহঙ্কারে আপনি কোন নীতি আদর্শ নিয়ে দলত্যাগ করেছেন সেটা জনগণের সামনে এসে বলুন।’’ সবশেষ পার্থ মিনিট দশেক বক্তব্য রাখেন। তিনিও শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করেই বলেন, ‘‘উনি যেটুকু করেছেন সেটা মা-মাটি-সরকারের প্রতিনিধি, তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে করেছেন। পদ চান না! জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হয়ে বসে থাকলেন। আসলে ওঁর সব চাই। ও তো চারটে আসন চেয়েছে। ও গোল্লা পাবে। সব আদিবাসী সমাজকে অনুরোধ করব, ঐক্যবদ্ধভাবে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’’ নেতাই গ্রামে মিছিল করেন জেলা তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। পুরোভাগে ছিলেন জেলা চেয়ারম্যান বিরবাহা সরেন, তৃণমূলের এসটি সেলের রাজ্য সভাপতি রবিন টুডু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস।

এ দিন সকাল সাড়ে আটটায় নেতাই পৌঁছন শুভেন্দু। রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে শহিদ বেদি পর্যন্ত হেঁটে পৌঁছন। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী, বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষ, তন্ময় রায়, রমাপ্রসাদ গিরিরা। শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে প্রণাম করে মাইক হাতে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি কোনওদিন পার্টির ঝান্ডা নিয়ে এখানে আসিনি। আমার খারাপ লেগেছে নেতাই গ্রামটা পতাকা দিয়ে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা কোনওদিন আমি করিনি। আপনারা দেখলেন, সাক্ষী থাকলেন।’’

নেতাই গ্রামে শহিদ বেদির কাছে বিজেপির যত পতাকা ছিল বুধবার রাতেই সে সব সরিয়ে নেওয়া হয়। তৃণমূলও রাতে দলীয় পতাকা সরিয়ে নেয়। তবে লালগড় জুড়ে তৃণমূলের পতাকা ছিল। আর শুভেন্দু ‘নেতাই নিয়ে কখনও রাজনীতি করিনি’ বললেও এ দিন কিন্তু বক্তব্য শেষে ‘ভারত মাতা কি জয়’ ও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেন, যা আদ্যন্তই বিজেপি ঘরানার স্লোগান। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলকে নিশানা করে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘যাঁরা নেতাইয়ে কোনওদিন আসেননি, শহিদ ও আহতদের পরিবারের কোনওদিন খোঁজ নেননি, তাঁরা এখন বড় বড় কথা বলছেন।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘আজ যেহেতু কুড়মি সমাজের একটা অংশ বনধ ডেকেছে, তাই আমরা সীমিত ভাবে অনুষ্ঠানটা করেছি।’’

শহিদ বেদি দেখিয়ে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘এই শহিদ বেদি আমি তৈরি করেছিলাম। এঁরা জায়গা দিয়েছেন, আমার প্রচেষ্টায় হয়েছে। এখানকার প্রতিটি ইটের সঙ্গে, প্রতিটি নামের সঙ্গে আমার সম্পর্ক।’’ তারপর নেতাই শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডাকে জড়িয়ে ধরে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘দেখলেন তো, শহিদ স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথবাবু কার সঙ্গে আছেন। এ সম্পর্ক খুব মজবুত সম্পর্ক।’’ এ দিন ছত্রধরকেও কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘এই সম্পর্কটা কেউ যদি ছেঁড়ার চেষ্টা করেন, দশ বছর জেলে কাটিয়ে, তা এত সহজে হবে না। কারণ, এই সব লোকের জন্যই লোকগুলো মারা গিয়েছিল। শুধু সিপিএমকে দোষ দিলে হবে না।’’

শুভেন্দুর সঙ্গে বিজেপি নেতারাও নেতাইয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি নেতাই আন্দেলনেও এ বার ভাগ বসাতে চাইছে গেরুয়া শিবির! ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সভাপতি সুখময় শতপথীর অবশ্য ব্যাখ্যা, ‘‘শুভেন্দুদা যখন তৃণমূলে ছিলেন তখন অরাজনৈতিক ভাবেই নেতাইয়ের কর্মসূচি করতেন। এখনও সেটাই করলেন। উনি যেহেতু বিজেপির রাজ্য নেতা তাই জেলা পদাধিকারী হিসেবে আমরা ছিলাম। আর ‘ভারত মাতা কি জয়’ কিংবা ‘জয় শ্রীরাম’ বিজেপির সম্পত্তি নয়। ভারতবর্ষের সব নাগরিকের ওই স্লোগান দেওয়ার অধিকার রয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement