প্রতীকী ছবি।
অভাবের সংসার।
সেই সঙ্গে জুড়েছিল স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহ। সব মিলিয়ে অশান্তি ছিল দম্পতির নিত্যসঙ্গী। এমনকি, সাত বছরের সন্তানের সামনেই মদ্যপ স্বামীর নিয়মিত মারধরে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন যুবতী। সালিশি সভা ডেকেও অশান্তি থামানো যায়নি। শেষমেশ রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে উদ্ধার হল ওই যুবতীর দেহ। পিংলা থানার রামপুরা গ্রামের ঘটনা।
বুধবার সকালে নিজের বাড়িতেই মাথা থেঁতলে যাওয়া অবস্থায় পাওয়া যায় রাধারানি পাল (২৮) নামে ওই যুবতীর দেহ। মা’কে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে পাশেই আত্মীয়ের বাড়িতে জানায় বছর সাতের সৌম্যদীপ। খবর যায় পুলিশে। পিংলা থানার পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধারের পরে খড়্গপুরে ময়না-তদন্তে পাঠায়।
পুলিশের অনুমান, হাতুড়ি কিংবা ভারী কোনও বস্তু দিয়ে যুবতীর মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন রাধারানির বাপের বাড়ির লোকেরাও। ঘটনায় জামাই ভোলানাথ পালের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে মেয়েকে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নারায়ণগড়ের তুতরাঙার বাসিন্দা রাধারানীর বাবা পরিমল জানা। ঘটনার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত ভোলানাথ।
খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলে সন্দেহের জেরে স্বামী খুন করেছে বলে মনে হচ্ছে। অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে নারায়ণগড়ের তুতরাঙার রাধারানির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পিংলার রামপুরার ভোলানাথের। বিয়ের সময়ে ভোলানাথের জামনা বাজারে একটি সোনার দোকান ছিল। অবশ্য বছর খানেক যেতেই সোনা দোকানে চুরি হয়েছে, বলে দাবি করে ভোলানাথ।
এর কিছুদিন পরে খড়্গপুরের রূপনারায়ণপুরে জাতীয় সড়কের ধারে একটি খাবার হোটেল খোলে ভোলানাথ। বছর সাতেক আগে সেই হোটেল বন্ধ করে ভোলানাথ দু’বছরের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সেই সময়ে কয়েকদিন বাপের বাড়িতে গিয়ে থেকেছিলেন রাধারানি। পরে ভোলানাথ ফিরে এসে টাইল্স মিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে। ততদিনে অবশ্য মদে আসক্ত হয়ে পড়েছেন ভোলানাথ। এই নিয়ে রাধারানির সঙ্গে তার অশান্তি লেগেই থাকত।
মাস কয়েক ধরেই অভাবের সংসারে পুরনো অশান্তির সঙ্গে রাধারানিকে নিয়েও সন্দেহ বাসা বেঁধেছিল ভোলানাথের মনে। এরপর রাধারানিকে মারধরের অভিযোগও ওঠে ভোলানাথের বিরুদ্ধে। মাসখানেক আগে রাধারানির বাপের বাড়ির অনুরোধে সাংসারিক অশান্তি মেটাতে রামপুরায় সালিশি সভার আয়োজন হয়েছিল। অবশ্য তাতেও সমস্যা মেটেনি।
রাধারানির বাবা পরিমল জানার কথায়, “আমি ভাবতে পারিনি জামাই এমন হয়ে যাবে। মেয়েকে অকারণে সন্দেহ করে মদ্যপ অবস্থায় মারধর করছিল। সালিশি ডেকেও সুফল পাইনি। শেষমেশ হাতুড়ি দিয়ে মাথায় মেরে মেয়েটাকে মেরে ফেলল। জামাইয়ের শাস্তি চাই।” আপাতত নাতি সৌম্যদীপকে নিজের কাছেই রাখার কথা ভাবছেন পেশায় চাষি পরিমল।