বিপদসীমার উপর বইছে ঘাটালের ঝুমি নদীর জল। ভেসেছে গ্রাম। ডাঙার খোঁজ রামচকে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
কয়েকদিন ধরে নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে বাড়ছিল ঘাটালের শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি নদীর জলস্তর। শুক্রবার সকালে ঝুমি নদীর জল উপচে জলমগ্ন হয়ে গেল ঘাটাল ব্লকের মনসুকা, সুলতানপুর, ইড়পালা গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। জল ঢুকেছে ঘাটাল পুর-শহরের ১২টি ওয়ার্ডেও। ঘাটাল শহরে এখনই নৌকা করে যাতায়াত করছেন বাসিন্দাদের একাংশ। মনসুকা-সহ ঘাটালের গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাটও জলের তলায় চলে গিয়েছে।
জলের তোড়ে শুক্রবার সকালে মনসুকায় ঝুমির উপর লোহার দু’টি সেতু ভেসে গিয়েছে। ফলে মনসুকার একাংশের সঙ্গে ঘাটালের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। প্রশাসনের তরফে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জল বাড়লেও এখনও কাউকে উদ্ধার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। ঘাটালের মহকুমাশাসক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “টানা বৃষ্টিতে ঘাটাল ব্লকের বেশ কিছু অংশ এবং ঘাটাল শহরে জলমগ্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই নদীর জল উপচে ডুবেছে বিভিন্ন এলাকা। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” সেচ দফতর অবশ্য জানাচ্ছে, শুক্রবার সকাল থেকেই ঘাটালের ঝুমি নদীর জল চরম বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। গন্ধেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বর নদীর জল সরাসরি ঝুমিতে এসে পড়ছে। ফলে এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে শুক্রবার বিকেলে ঘাটালে শিলাবতী নদীর জল প্রাথমিক বিপদ সীমার ছুঁয়েছে।
সেচ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। নদীগুলির এখন যা অবস্থা, আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে দুই থেকে চার দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে ঘাটালের পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘাটাল শহরে অল্প অল্প করে জল ঢুকতে শুরু করেছিল। এ দিন সকালেই ঘাটাল শহরের এক থেকে ১২টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশও জলমগ্ন হয়েছে। পুরসভার প্রশাসক বিভাস ঘোষ বলেন, “শহরে জল বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
শুক্রবার ঘাটাল ব্লকের মনসুকা ১,মনসুকা ২ এবং সুলতানপুর, ইড়পালা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। জলের চাপে শুক্রবার মনসুকায় পারাপারের জন্য লোহার সেতু দু’টি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ঘাটালের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন সাংসদ দেবও। শুক্রবার সমাজমাধ্যমে তাঁর বার্তা, ‘আমাদের প্রতিনিধিরা ওখানে রয়েছেন। আমিও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি’। অন্য দিকে, ঘাটালের মেঠালাতে ঝুমি নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই ওই বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেছে শেষ দফতর। বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ঘাটালে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) একটি দল কাজ শুরু করেছে। দিনকয়েক আগেই দলটি ঘাটালে এসে পৌঁছয়। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রয়োজনে আরও একটি দলকে ডাকা হতে পারে বলে খবর।