প্রতীকী ছবি।
রাজস্ব আদায়ের বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে গত আর্থিক বর্ষে বিয়ার বিক্রিতে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলা। ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষে শুধুমাত্র বিয়ার বিক্রি করে এই জেলা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১০ কোটি ৭৮ লক্ষ ৫১ হাজার ৩৮৮ টাকা। চলতি বছরেও চড়া গরমে বিয়ারের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু এবার নেই পর্যাপ্ত যোগান। যার ফলে শুরু হয়েছে কালোবাজারি। ওড়িশা থেকে বেআইনি ভাবে বিয়ার ঢুকছে এই জেলায়। রবিবার নয়াগ্রাম থানার খড়িকামাথানি এলাকা থেকে এক যুবককে গ্রেফতারও করেছে আবগারি দফতর। জানা গিয়েছে, ধৃতের নাম মনোজ শীট (২৭)। তার বাড়ি নয়াগ্রাম থানার গোয়ালডিহা এলাকায়। তার কাছ থেকে ওড়িশা থেকে নিয়ে আসা ৮০ লিটার বিয়ার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতের ১৪ দিন জেল হেফাজত হয়েছে।
জেলা আবগারি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় বিয়ারের ঘাটতি দেখা দেয় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে। ঝাড়গ্রাম জেলায় বিয়ার আসে খড়্গপুরের একটি সরকারি ডিস্ট্রিবিউটার কেন্দ্র থেকে। যোগান কমে যাওয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। গত বছর এপ্রিলে জেলায় কোন দোকান কত বিয়ার বিক্রি হয়েছে সেই পয়েন্ট অনুয়ায়ী বিয়ার সরবরাহ করা হচ্ছিল। সম্প্রতি এখন সেই রেশনিং উঠেছে। এখন যেকোনও লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকান একবার বুকিংয়ে সর্বোচ্চ দুশো কেস বিয়ার নিতে পারবে। একটি কেসে ৩৩০ মিলিলিটরের বোতল থাকে ২৪টি, ৫০০ মিলিলিটারের বোতল থাকে ২০টি, ৬৫০ মিলিলিটারের বোতল থাকে ১২টি। তবে পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। গ্রীষ্মপ্রবণ ঝাড়গ্রাম জেলায় বিয়ারের চাহিদা এমনিতেই বেশি। তার সঙ্গে সরবরাহে ঘাটতি থাকার সুযোগ নিয়েই এবার কালোবাজারি শুরু হয়েছে।
জেলা আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলায় মোট লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের দোকান রয়েছে ৩৬টি। তারমধ্যে বিয়ার বিক্রি করার লাইসেন্স রয়েছে ৩৪টি দোকানের। ৩৪টি দোকানের মধ্যে ২৬টি অফশপ। অনশপ (বার, হোটেল) ৮টি। ৮টি অনশপের মধ্যে ৪টি ঝাড়গ্রাম শহরে রয়েছে। জামবনি ব্লকের চিচিড়ায় একটি, গোপীবল্লভপুরে একটি, শিলদায় একটি, লালগড়ের সিঁজুয়ায় একটি রয়েছে। অভিযোগ, অনেক মদের দোকান থেকে বিয়ার সরাসরি দালালদের দেওয়া হচ্ছে। দালালরা সেই বিয়ার প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। ১১৫-১২০ টাকা দামের বিয়ার আড়াইশো টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কিছু বিয়ার আবার মদের দোকান থেকে ঘুরপথে বার, হোটেলে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকদিন ঝাড়গ্রাম শহরের মদের দোকানগুলিতে বিয়ার বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। রবিবার থেকে অবশ্য কয়েকটি দোকানে ফের বিয়ার বিক্রি শুরু হয়েছে। গোলমাল এড়াতে বিক্রিতে রেশনিং করছে কিছু দোকান। যেমন সোমবার পুরাতন ঝাড়গ্রামের একটি দোকান থেকে মাথা পিছু দু’টি করে বিয়ার দেওয়া হয়নি।
ঝাড়গ্রাম জেলা আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোনও অফ শপ বিয়ারে নির্ধারিত দামের থেকে এক টাকাও বেশি নিতে পারবে না। যদি কেউ নিয়ে থাকে তা বেআইনি। যোগান কম থাকায় খোলা বাজারে চড়া দামে বিক্রি করার খবর এসেছে। ধরা পড়লে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’