প্রচারের শেষ লগ্নে একে অপরকে টেক্কা দিতে তারাদের উপরই ভরসা করছে রাজনৈতিক দলগুলি। দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে আসছেন সাংসদ দেব, সন্ধ্যা রায়। বিজেপির হয়ে প্রচারে আসছেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়দেরও প্রচারে আনার জোর চেষ্টা চলছে বলে বিজেপির এক সূত্রে খবর। নির্বাচনী প্রচারে বিনোদন জগতের মুখদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠা নতুন কিছু নয়। কমবেশি সব দলই চায় তারকাদের প্রচারে নামিয়ে ভোট টানতে।
প্রচারে দেব ও সন্ধ্যা রায়কে আনার জন্য প্রথম থেকেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। অবশেষে তারাদের প্রচারে আসার আশ্বাস মেলায় দলে খুশির হাওয়া। দলীয় সূত্রে খবর, কাল, রবিবারই পুর- প্রচারে রেলশহরে আসছেন তৃণমূলের এই দুই তারকা সাংসদ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “দলের সাংসদেরা প্রচারে আসছেন। রেলশহরে সভাই হবে।”
আগামী শনিবার খড়্গপুরে পুরভোট। অর্থাত্, হাতে আর বেশি সময়ও নেই। কাল, রবিবারই পুরভোটের আগে শেষ ছুটির দিন। ছুটির দিনটিকে পুরোমাত্রায় প্রচারের কাজে লাগাতে প্রস্তুত সব দলই। তৃণমূলের হয়ে ইতিমধ্যে প্রচারে এসেছেন সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা। আগামী সোমবার প্রচারে আসছেন সুলতান আহমেদ, সৌমেন মহাপাত্র, জ্যোতির্ময় কর’রা। প্রচারে আসার কথা শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম, বেচারাম মান্নাদেরও। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ বলেন, “রাজ্য নেতৃত্বের অনেকেই পুরভোটের প্রচারে খড়্গপুরে আসবেন।”
প্রচারে তৃণমূলকে জমি ছাড়তে নারাজ বিজেপি। গত লোকসভায় খড়্গপুরে বিজেপির ফল তাদের বাড়তি উত্সাহ দিচ্ছে। দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করতে আগামী মঙ্গলবার খড়্গপুরে আসছেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ইতিমধ্যে প্রচারে এসেছেন কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ প্রমুখ। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “কিছু প্রচারসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। আরও কিছু প্রচারসূচি শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে।”
পিছিয়ে নেই কংগ্রেসও। রেলশহর খড়্গপুর কংগ্রেসের ‘গড়’ বলেই পরিচিত। দলের বর্ষীয়ান বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পালকে (চাচা) সামনে রেখেই এখানে ভোটযুদ্ধে নেমেছে তারা। ইতিমধ্যে পুরভোটের প্রচারে রেলশহরে এসেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, বিধায়ক মানস ভুঁইয়া প্রমুখ। আজ, শনিবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে আসার কথা প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের। শেষ- বেলায় কেন্দ্রীয় নেতা শাকিল আহমেদকে প্রচারে আনার জোর চেষ্টা চলছে বলেও দলেরই এক সূত্রে খবর। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “তারকার দরকার নেই। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।”
পুরভোটের প্রচারে তাল মেলাচ্ছে বামেরাও। ইতিমধ্যে বাম- প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পণ্ডা, সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য। আগামী সপ্তাহে রেলশহরে কয়েকটি জাঠা হবে। জাঠায় থাকবেন দীপক সরকার, তরুণ রায়, সন্তোষ রাণাদের মতো জেলার বাম নেতৃত্ব। তৃণমূল, বিজেপি প্রচারে তারকাদের নিয়ে এলেও বামেদের প্রচারে অবশ্য কোনও তারকা থাকছে না। সিপিআইয়ের জেলা সহ- সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট অবশ্য বলেন, “আমরা চাঁদের- হাট বসাতে চাই না! চাঁদের তো নিজস্ব কোনও আলো নেই। সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়। আমাদের কাছে মানুষই সব। মানুষের উপর আমাদের বিশ্বাস আছে।”
তৃণমূলের তারকা- প্রচার কী কংগ্রেসের ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলতে পারে? এ বিষয়ে শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “অভিনয়ের সঙ্গে রাজনীতির কী সম্পর্ক আছে? অভিনয় অভিনয়ের জায়গায়। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। মানুষ সব দেখছেন। ভালমন্দ বুঝছেন। মানুষের উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। শেষ সিদ্ধান্ত মানুষই নেবেন।”