—প্রতীকী চিত্র।
গতবারের জেতা ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসন কেন ধরে রাখা গেল না? অন্তর্তদন্ত শুরু হয়েছে বিজেপির শীর্ষস্তর থেকে।
সূত্রের খবর, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বোম্মারাবেত্তু লক্ষ্মীজনার্দন সন্তোষ পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা কেন্দ্রগুলির ফলাফল পর্যালোচনা করছেন। ভোটের ফল প্রকাশের পর দিল্লি থেকে একটি পর্যবেক্ষক দল এসে নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলে গিয়েছেন। কী কী কারণে ঝাড়গ্রাম আসন ধরে রাখা গেল না সে বিষয়ে বিভিন্ন স্তর থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। দলের তরফে ভোটের খরচের টাকা বুথস্তর পর্যন্ত পৌঁছেছিল কি-না সে বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বিজেপির জেলা নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। জেলার এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘হারের কারণ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে কোনও দল এসেছে কি-না সে খবর আমাদের কাছে নেই।’’
যদিও বিজেপির এক কর্মী অবশ্য জানালেন, পাঁচ জনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। নেতৃত্বে ছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় এক যুবক। আর এক বিজেপি কর্মী বলছেন, ‘‘ওই দলের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কিছু কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের কথা বলার ধরন দেখে প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম তাঁরা সঙ্ঘের লোক। পরে অবশ্য বুঝতে পারি, বিজেপির তরফেই ভোটের ফলের কার্যকারণ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রেও এমন পর্যবেক্ষক দলের সুলুকসন্ধান করার বিষয়ে সমর্থন মিলেছে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনটি তৃণমূলের থেকে দখল করেছিল বিজেপি। সেবার বিজেপি প্রার্থী কুনার হেমব্রমের কাছে ১১,৭৬৭ ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূলের বিরবাহা সরেন টুডু। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। পরে অবশ্য বিধানসভা, পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে ধরাশায়ী হয়েছে গেরুয়া শিবির। এবার স্বচ্ছ ভারমূর্তির চিকিৎসক প্রণত টুডুকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী কালীপদ সরেনের কাছে ১ লক্ষ ৭৪ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছেন প্রণত।
সূত্রের খবর, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এবার প্রায় দু’শো বুথে বিজেপির পোলিং এজেন্ট ছিল না। বিজেপির এক কর্মী জানাচ্ছেন, ভোট শেষ হওয়ার পর কমপক্ষে দু’শো বুথ থেকে ফর্ম ১৭সি দলের জেলা কার্যালয়ে এসে পৌঁছয়নি। ভোট গ্রহণ শেষে ভোটদানের যাবতীয় তথ্য ওই ফর্মে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্ট বুথের প্রিসাইডিং অফিসার। সেই ফর্মে পোলিং এজেন্টদের নামও থাকে। ওই ফর্মের কপি পোলিং এজেন্ট সংগ্রহ করে তার দলের নেতৃত্বের কাছে জমা দেয়। ওই সব বুথ স্তরে ভোট করানোর জন্য টাকা পাঠানো হয়নি বলেই মনে করা করছেন বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতিতে ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে দলের জেলা স্তরের খোলনলচে বদলের সম্ভাবনা দেখছেন বিজেপির নিচু তলার কর্মীরা। এই আবহে বিজেপির দ্বন্দ্বও চরমে উঠেছে। রবিবার দুপুরেই বিজেপির জেলা কার্যালয়ের দোতলায় জেলা সভাপতি এবং জেলার দলীয় কোষাধ্যক্ষের বসার পাশাপাশি দু’টি ঘরে তালা লাগিয়ে দেন একাংশ বিক্ষুব্ধ কর্মী। তখন অবশ্য জেলা সভাপতি তুফান মাহাতো জেলা কার্যালয়ে ছিলেন না। কোষাধ্যক্ষ অন্য ঘরে ছিলেন। ওই সময় জেলার অন্যান্য নেতারা দলীয় কার্যালয়ের ভিআইপি কক্ষে ছিলেন। তাঁরা অবশ্য নীরব ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জেলা বিজেপির সভাপতি তুফান মাহাতো ফোন ধরেননি। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথী বলছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’’