Panchayat Election 2023

বাকচার খুনের প্রভাব ভোটে! চাপানউতোর 

ময়নায় বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনা যে জেলা জুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছে, তার প্রভাব কিছুটা হলেও আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৩ ০৭:৫২
Share:

নিহতের বাড়িতে সুকান্ত মজুমদার। নিজস্ব চিত্র।

বৃষ্টিতে গত কয়েক দিনে তাপমাত্রার পারদ কমেছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগেই ময়নার বাকচায় বিজেপি নেতা খুনের পরেই জেলায় তরতর করে চড়তে শুরু করেছে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ। জেলার একটি ছোট পঞ্চায়েত এলাকা বাকচ ঘিরে জেলার রাজনীতির ময়দানে আলোড়ন পড়েছে। নন্দীগ্রাম, খেজুরির জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে রাজনীতিতে যেন নতুন ভরকেন্দ্র এখন এই বাকচা।

Advertisement

বাকচার গোড়ামহল গ্রামে সোমবার বিকালে বিজয় ভুঁইয়াকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার ১২ ঘণ্টা ময়না-বন্‌ধ কর্মসূচি পালন করছেন বিজেপি কর্মীরা। পাশাপাশি, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে পথ অবরোধ করা হয়েছে। কিছু এলাকায় ওই অবরোধ কর্মসূচি কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি মোহনলাল শী এবং আরেক বিজেপি নেতা কৃষ্ণগোপাল দাসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আটক হয়েছেন আরও বহু বিজেপি কর্মী।

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। গত বিধানসভা ভোটের পর এখনও পর্যন্ত সভা-পাল্টা সভা, উন্নয়ন আর দুর্নীতি প্রসঙ্গে সুর চড়ানো— এসব নিয়ে আবর্তিত হচ্ছিল জেলার রাজনীতি। মাঝে মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপির এলাকা দখল ঘিরে বোমাবাজির অভিযোগ সামনে এসেছে। কিন্তু, সোমবার বিকেলের পর থেকে জেলার রাজনীতির অভিমুখ ঘুরে গিয়েছে বিজেপির বুথ সভাপতি খুনের প্রসঙ্গে। রাতারাতি যেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে গিয়েছে ওই খুনের ঘটনা। এদিন বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে ১০৫ টি জায়গায় আমাদের দলের কর্মীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। ময়নাতে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ সর্বাত্মক হয়েছে। আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও যেসব গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেখানেও কার্যত আমাদের প্রতিবাদে সাড়া মিলেছে।’’

Advertisement

শুভেন্দু দাবি করেছেন, ‘‘আমাদের কর্মীদের মনোবল তুঙ্গে। গোটা জেলাতে টিএমসি নামক বস্তু উবে গিয়েছে। দেখা যায়নি। এমনকি বন্‌ধ ভাঙার মতো মানসিক আর সাংগঠনিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সর্বত্র তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হচ্ছে।’’ দলীয় নেতার খুনে আলোড়ন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে এ দিন নিহত কর্মীর বাড়িতেও গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের একজন বুথ সভাপতি, বড় মাপের কর্মীকে হারালাম। আমরা লড়াই ছাড়ছি না। সৌমেন মহাপাত্র, সংগ্রাম দলুই, যেই হোক না কেন, এখান থেকে বিজেপির পতাকা নামাতে পারবেন না। আমরা একজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাকেও গ্রেফতার দেখানো হয়নি। কেন্দ্রায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে জানাব, এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করার জন্য।’’

এদিকে, বিজয় খুনের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল এবং বিজেপি দুই শিবিরকেই দায়ী করেছে সিপিএম। এ প্রসঙ্গে সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, "যে কোনও মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জনমানুষের সহানুভূতি আদায় করার জন্য অবরোধ, বন্‌ধ কর্মসূচি পালন করছে। তবে বিজয়কে যারা খুন করেছে, সেই ঘটনায় আইনি শাস্তির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। আর যদি ওঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকে তাহলে প্রশাসনে জানানো উচিত ছিল। এ ধরনের খুন এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি কোনটাই কাম্য নয়।’’

ময়নায় বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনা যে জেলা জুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছে, তার প্রভাব কিছুটা হলেও আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও এ প্রসঙ্গে তমলুকের বিধায়ক তথা সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেছেন, ‘‘প্রভাব পড়েছে কি না, জনগণ ব্যালোটে জবাব দিয়ে বুঝিয়ে দেবেন। তৃণমূল খুনের রাজনীতি করে না। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement