রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রের খবর, ৩৪ ডেসিমেল ওই জমির মূল্য ৬৯ লক্ষ টাকা।
হামাগুড়ি থেকে সবে হাঁটা শুরু। এর মধ্যেই জেলায় বড় ‘ঝাঁপ’ দিল বিজেপি।
পূর্ব মেদিনীপুরে দলীয় কার্যালয় বানাতে প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে ইতিমধ্যে জমি কিনেছে বিজেপি। আজ, রবিবার ওই জমিতে জেলা কার্যালয় তৈরির সূচনা করবেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যা দেখে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য— ‘জমি কিনে জেলায় রাজনৈতিক জমির ভিত শক্ত করতে চাইছে বিজেপি’।
বিজেপি সূত্রের খবর, তমলুকের নিমতৌড়ির কাছে কাকগেছিয়া এলাকায় হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে কার্যালয় তৈরির জন্য জমিটি কেনা হয়েছে। রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রের খবর, ৩৪ ডেসিমেল ওই জমির মূল্য ৬৯ লক্ষ টাকা। যদিও দলের একটি অংশ জানাচ্ছে, জমির জন্য এক কোটিরও বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে নতুন জেলা কার্যালয় ভবন গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি (তমলুক) নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগেই নতুন জেলা কার্যালয় ভবন গড়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কাকগেছিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে জেলা কার্যালয় চলে। দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিধানসভা নির্বাচনের সময় জেলায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনার জন্য নিজস্ব কার্যালয় খুব প্রয়োজন। সে জন্য দ্রুত জেলা কার্যালয় গড়ার
চেষ্টা হচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, এ বছরের লোকসভা ভোটে বিজেপি জেলায় যথেষ্ট ভাল ফল করেছে। তমলুক এবং কাঁথি, ওই দুই কেন্দ্রে তারা পেয়েছে ৩৯ শতাংশ ভোট। কিন্তু এখনও জেলায় স্বমহিমায় রয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের শাসকদল হিসাবে আট বছরেরও বেশি ক্ষমতায় রয়েছে তারা। জেলা পরিষদ-সহ সব পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতেও তাদের দখলে। এমন তৃণমূলেরই তাদের শক্তঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরে নিজস্ব জেলা কার্যালয় নেই। তমলুকের নিমতৌড়িতে নব নির্মিত জেলা পরিষদের কাছে তৃণমূল শিক্ষক সেলের ‘শিক্ষক ভবনে’ অধিকাংশ সময় দলের জেলাস্তরের বৈঠক-সভা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি’র কার্যালয় তৈরির জন্য জমি কেনার আলাদা রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, এ ভাবেই ঝাড়গ্রামেও একটি পুরনো দোতলা বাড়ি কিনে তা আধুনিক ভাবে সাজিয়ে জেলা কার্যালয় বানিয়েছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে সেখান থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে দলের যাবতীয় কাজ। আর হাতেনাতে তার ফল মিলেছে ভোটের গণনার দিন। তাই বিধানসভা ভোটের আগে এত বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে জমি কেনা এবং দলীয় কার্যলয় তৈরিকে অন্য গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগেই দলীয় কার্যালয় গড়ার জন্য এত বিপুল টাকায় জমি কেনা হল কেন? ওই টাকার উৎস কি? নবারুণের জবাব, ‘‘জেলা কার্যালয়ের জন্য জমি কেনার এবং ভবন গড়ার অর্থ দিচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের পক্ষেই জমি কেনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ভবনটি এক তলা করা হবে। পরে দোতলা বা তিনতলার কাজ সম্পূর্ণ হবে।’’
বিজেপি’র জমি কেনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘ওরা ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলে। ওদের এই কার্যলয় তৈরিতে জেলার রাজনীতিতে কোনও প্রভাব পড়বে না।’’