নাগরিকত্ব আইন মানুষের স্বার্থে, বোঝাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। রবিবার মেদিনীপুর শহরের কর্নেলগোলায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
দরজায় টোকা। বেরিয়ে এলেন গৃহকর্তা। দুয়ারে হাজির বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার ঘোষ, দলের জেলা সভাপতি শমিত দাশরা।
তুষার বললেন, ‘‘আমরা বিজেপি-র। নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তৃণমূলের লোকেরা ভুল বোঝাচ্ছে মানুষ। আমরা ঠিকটা জানাতে এসেছি। কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে নয়, নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।’’ তারপর গৃহকর্তার হাতে লিফলেট ধরিয়ে বললেন, ‘‘পড়বেন। ওতে একটি টোল ফ্রি নম্বরও দেওয়া রয়েছে। যদি মনে হয়, লিফলেটে যা লেখা রয়েছে ঠিক, তাহলে ওই নম্বরে একটা মিসড কল দেবেন।’’
নতুন বছরের প্রথম রবিবার এ ভাবেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেলেন বিজেপি কর্মীরা। নতুন আইনের সমর্থনে চলল প্রচার। আইনের বিরুদ্ধে পাল্টা পথে নামল বাম ও তৃণমূল।
নাগরিকত্ব আইনের সুফল প্রচারে ইতিমধ্যেই ‘অভিনন্দন যাত্রা’ করছে বিজেপি। হচ্ছে সই সংগ্রহ অভিযান। এ দিন মেদিনীপুর শহরের কর্নেলগোলায় বাড়ি বাড়ি প্রচার করে বিজেপি। ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক তুষার ঘোষ, বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশরা। শমিত বলেন, ‘‘তৃণমূল মানুষকে ভুল তথ্য দিচ্ছে। আমরা সত্যিটা জানাচ্ছি।’’ নতুন এই আইনের বিরোধিতায় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বাস, ট্রেন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ দিন কৌশলে সেই স্মৃতিও উস্কে দিয়েছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে এ দিন বিজেপি-র ‘অভিনন্দন যাত্রা’ হয়েছে চন্দ্রকোনা শহরে। ছিলেন বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়, ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক রামকুমার দে-রা। চন্দ্রকোনার জয়ন্তীপুর থেকে শুরু হয় মিছিল। তারপর রাজ্য সড়ক ধরে গোঁসাইবাজার হয়ে চন্দ্রকোনা শহর পরিক্রমা করে। মিছিলে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিজেপি-র চন্দ্রকোনা দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি রাজীব পাল বলেন, “এ বার বুথে বুথেও নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনের মিছিল করা হবে।” দাসপুরের বকুলতলা থেকে দাসপুর পর্যন্তও বিজেপি-র মিছিল হয়েছে। ঘাটাল শহরের কলেজ মোড়ে এ দিন পথসভা করেছে বিজেপি। রবিবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়াতেও মিছিল করেছেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। মিছিল শেষে সভাও হয়। সভায় তুষার, শমিতদের দাবি, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর সরকার দেশের মানুষের স্বার্থে নতুন নাগরিকত্ব আইন করেছে।’’
জেলার নানা প্রান্তে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতাতেও মিছিল হয়েছে এ দিন। কেশপুরে মিছিল করেথে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। মিছিল কেশপুর বাজার এলাকা পরিক্রমা করে। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে— ‘সিএএ আইন মানছি না, মানব না’।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আগামী ৮ জানুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে বাম-সহ বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি। তার সমর্থনে এ দিন গড়বেতায় বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি মিছিল করে। মৌলাড়ায় মিছিলের সূচনা করেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। বগড়িডিহি, পিয়াশালা হয়ে মিছিল প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শেষ হয় হুমগড় মোড়ে। সেখানে পথসভায় বক্তব্য রাখেন বিজয় পাল, তপন ঘোষ, কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। সিপিএম নেতা দিবাকর ভুঁইয়া বলেন, ‘‘৮ জানুয়ারি দেশব্যাপী ধর্মঘটের সমর্থনে ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মিছিল হয়েছে। ধর্মঘট সফল করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’’
এ দিন খড়্গপুরের নিমপুরা থেকে সিটু ও আইটাকের নেতৃত্বে মিছিল বেরোয়। ধর্মঘটের সমর্থনে স্লোগান ওঠে। মালঞ্চ, গোলবাজার ঘুরে খরিদায় শেষ হয় মিছিল।