Sukanta Majumdar

BJP: রাজ্যে ক্ষমতায় আসার যোগ্য হয়ে ওঠেনি বিজেপি, বললেন খোদ রাজ্য সভাপতি সুকান্ত

‘‘আমাদের এক জন টিকিট পেয়েছে, আর দু’জন মিলে তাঁর পিছনে লেগে যাচ্ছি। তিনি হারলে পরের বার আমার সুযোগ হবে, এই ভেবে।’’

Advertisement

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫৪
Share:

বিজেপি রাজ্য সভাপতির মুখে আত্মসমালোচনা। ফাইল চিত্র।

এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার যোগ্য হয়ে ওঠেনি বিজেপি— আত্মসমালোচনায় এমন মতই শোনা গেল খোদ দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মুখে। শুধু তা-ই নয়, ভোটের লড়াইয়ের কৌশল তৃণমূলের কাছ থেকে শেখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গেরুয়া শিবির স্লোগান দিয়েছিল, ‘এ বার দুশো পার’। বাস্তবে অবশ্য দুশো ছাপিয়েছে তৃণমূল। আর বিজেপিকে থামতে হয়েছে একশোরও অনেকটা আগে।

Advertisement

রবিবার মেদিনীপুরে দলের সাংগঠনিক বৈঠকে ফলাফলের পর্যালোচনা করতে গিয়ে সুকান্ত মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমরা কর্মীদের বলছি, কিছু বলার থাকলে উপরে বলবেন। আর আমরা নিজেরাই চায়ের দোকানে গিয়ে অন্যের সম্পর্কে বলছি। মানুষ অত বোকা নয়। মানুষ সব দেখে। আমরা ক্ষমতায় আসার যোগ্য হইনি।’’ বিধানসভা ভোটের সময় রাজ্য সভাপতি পদে ছিলেন দিলীপ ঘোষ। তাঁকে পাশে বসিয়েই সুকান্ত বলেছেন, ‘‘আমরা দুশোর স্বপ্ন নিয়ে এগোলাম। ‘সরকার গড়ছি, সরকার গড়ছি’, এমন একটা হাইপে চলে গেলাম। লোককে স্বপ্ন দেখানোর কথা ছিল। উল্টে নিজেরাই স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্নের মধ্যে নাচতে শুরু করলাম। তার পর যা হয়, বেশি স্বপ্ন দেখলে। ধপাস করে নীচে পড়লাম।’’

ক’দিন ধরেই দিলীপ-সুকান্তের টানাপড়েন নিয়ে তোলপাড় বঙ্গ বিজেপি। নিজেদের মধ্যে দলাদলিই যে বিজেপির রাজ্যজয়ের স্বপ্ন নষ্ট করেছে, তা স্পষ্ট করেছেন রাজ্য সভাপতি। সুকান্তের কথায়, ‘‘আমাদের এক জন টিকিট পেয়েছে, আর দু’জন মিলে তাঁর পিছনে লেগে যাচ্ছি। তিনি হারলে পরের বার আমার সুযোগ হবে, এই ভেবে। এই মানসিকতা থেকে যত ক্ষণ না পর্যন্ত আমরা বেরোতে পারব, তত ক্ষণ বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’’

এর পরেই তৃণমূলকে দেখে শেখার কথা বলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। বৈঠকে সুকান্তের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলকে দেখুন। গোটা বছর নিজেরা মারামারি করছে। কিন্তু যখন ভোট আসে, সব চোর একসঙ্গে হয়ে যায়। কারণ ওরা জানে, ভোটটা যদি জিততে না-পারি, তা হলে আর তোলাটা তুলতে পারব না। আর আমরা করছি উল্টোটা। গোটা বছর সবার সঙ্গে হাত ধরে ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলতে বলতে যাচ্ছি। আর ভোটের সময়ে যেই প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেল, শুরু হয়ে গেল কেমন করে তাঁকে হারানো যায়, সেটা ভাবা। এ ভাবে ভোটে জেতা যায় না।’’ কর্মীদের উদ্দেশে সুকান্তের আরও বার্তা ‘‘আমাদের বুথ সভাপতিও আশা করেন, রাজ্য সভাপতিকে ফোন করব। তৃণমূলের একটা ব্লক সভাপতিকে বলুন তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করতে। আসলে আপনি নিজের দলের রাজ্য সভাপতিকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমগোত্রীয় মনে করছেন না। সেটা দিলীপদা হোক, আমি হই কিংবা যেই হন। আপনি তো আপনার নেতাকেই যোগ্য মনে করছেন না। তা হলে জনগণ কেন মনে করবে?’’

রাজ্য বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বের এই মূল্যায়ন নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘ওঁরা হেরেছেন কিন্তু হারের কারণ বোঝেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে গেলে তাঁর বিকল্প চাই। তাঁর লড়াই, ভাবনা, পরিকল্পনা, কাজের বিকল্প বিজেপিতে কোথায়? এটা যত ক্ষণ না বুঝবেন তত ক্ষণ মায়াকল্পে থাকবেন। দখলদারির মনোভাব নিয়ে গণতন্ত্রে জয় পাওয়া যায় না।’’

Advertisement

রবিবার মেদিনীপুরে বিজেপির এই সাংগঠনিক বৈঠকে আগাগোড়া আত্মসমালোচনার সুর ছিল সুকান্তের গলায়। নিজের বক্তব্যের শুরুতে ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনি তোলেন তিনি। তার পরেই বলেন, ‘‘এই হলে ১০-১২ জন আছেন, যাঁরা মুখই খুললেন না (জয় বললেন না)। হাততালি দেওয়ার সময়েও সবার হাততালি পড়ে না। আর আমরা পরিবর্তন করব? কেউ ভোট দেবে না আমাদের এই অবস্থা দেখলে।’’ দিলীপকে পাশে রেখে সুকান্ত আরও বলেছেন, ‘‘আগে ছিল পার্টিকে ছোট থেকে বড় করার চ্যালেঞ্জ। এখন চ্যালেঞ্জ অন্য। আপনি পরীক্ষায় ১০ পাচ্ছেন। ১০ থেকে ৪০ বা ৫০ বা ৬০ পাওয়া সোজা। কিন্তু ৬০ থেকে ৯০ পাওয়া বেশ কঠিন।’’

বৈঠকে দিলীপও বলেছেন, ‘‘নির্বাচনে কেন জিতল না, দোষারোপ শুরু হয়ে গেল। এটা পরাজিতের মানসিকতা। এতে মনোবল ডাউন হয়। অন্ধকারে চেঁচিয়ে তো লাভ নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement