—প্রতীকী চিত্র।
এখনও কি কন্যা ভ্রুণ হত্যা ঠেকানো যায়নি? প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কয়েকটি এলাকার পরিস্থিতিই। সেখানে শিশুপুত্রের তুলনায় শিশুকন্যার জন্মের অনুপাতের অবনতি ঘটেছে। তবে কি মাতৃগর্ভেই নাশ হচ্ছে কন্যা ভ্রুণ, চলছে চর্চা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, দাসপুর, সবং, মেদিনীপুর, মোহনপুর প্রভৃতি এলাকায় কন্যাসন্তানের জন্মের হার কম। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০২৩-’২৪ এ জেলায় ২৬,৫৩৯ জন পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে। কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে ২৫,৩৮০। অর্থাৎ, প্রতি এক হাজার ছেলে পিছু মেয়ে জন্মেছে ৯৫৬জন। এই হার মোটের উপর স্বাভাবিক। কিন্তু জেলার ওই সব এলাকায় প্রতি হাজার ছেলে পিছু মেয়ে জন্মেছে ন’শোরও কম। এটাই অস্বাভাবিক ঠেকছে অনেকের কাছে। তাঁদের মতে, নিশ্চিতভাবে ওই সব এলাকায় এখনও কন্যা ভ্রুণ হত্যা অব্যাহত রয়েছে।
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি মেদিনীপুরে জেলাস্তরের এক বৈঠকেও বিষয়টির পর্যালোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ওই সব এলাকার আলট্রাসনোগ্রাফি সেন্টারে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি, এ ক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা আরও বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’
প্রসূতিদের অনেকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন, অনেকে বেসরকারি হাসপাতালে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে পশ্চিম মেদিনীপুরে সরকারি হাসপাতালে ১৮,১১৫ জন পুত্রসন্তানের ও ১৭,২৪৪ জন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার ছেলে পিছু মেয়ে জন্মেছে ৯৫২ জন। ওই সময়ে জেলায় বেসরকারি হাসপাতালে ৮,৪২৪ জন পুত্রসন্তানের ও ৮,১৩৬ জন কন্যাসন্তানের জন্ম হয়েছে। সেখানে প্রতি হাজার ছেলে পিছু মেয়ে জন্মেছে ৯৬৬ জন।
এই যখন জেলার সার্বিক পরিস্থিতি, তখন ঘাটাল, দাসপুর, সবং, মেদিনীপুর, মোহনপুর প্রভৃতি কয়েকটি এলাকার পরিস্থিতি উদ্বেগের। দাসপুর-১ ব্লকে যেমন প্রতি হাজারে ছেলে পিছু মেয়ে জন্মেছে ৭৪৩, দাসপুর-২ ব্লকে ৮৩৯, ঘাটালে ৮৬৩, সবংয়ে ৮৭২, মেদিনীপুরে প্রতি হাজার ছেলে পিছু মেয়ে জন্মেছে ৮৬৭ জন, মোহনপুরে ৮৩৭ জন। অনেকের মতে, ‘‘এটা ভয়ঙ্কর চিত্র। সন্দেহ নেই।’’
দেশে কন্যা ভ্রুণ হত্যা রোধে সুস্পষ্ট আইন রয়েছে। ১৯৯৪ সালের সেই আইন অনুসারে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ এবং কন্যা ভ্রুণ হত্যা— উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অনেকের মতে, তাও এই মারাত্মক অপরাধ বন্ধ করতে যে কঠোর পদক্ষেপ করা প্রয়োজন, তা অনেক সময়েই করা হয় না। ফলে, আইনের আড়ালেই অবাধে লিঙ্গ নির্ধারণ এবং কন্যা ভ্রুণ হত্যার আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে। জেলার ইতিউতি আলট্রাসনোগ্রাফি সেন্টার রয়েছে। কিছু সেন্টারে মোটা টাকার বিনিময়ে ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ, অবৈধ গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটছে বলেই আশঙ্কা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকও মানছেন, ‘‘কিছু এলাকায় মেয়ের সংখ্যা যা হওয়া উচিত, তার থেকে খানিক কম। কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
ওই সব এলাকায় ‘সেভ গার্ল চাইল্ড’ শীর্ষক সচেতনতা কর্মসূচি হবে শীঘ্রই। নার্সিংহোম, আলট্রাসনোগ্রাফি সেন্টারগুলিতে পরিদর্শন হবে। সেন্টারের সামনে ‘গর্ভস্থ ভ্রুণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয় না’— এমন লেখা সম্বলিত বোর্ড রাখা নিয়ম। তা রয়েছে কি না, সে নিয়েও নজরদারি
বাড়ানো হচ্ছে।