বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে উপহার তুলে দেন বিরবাহা হাঁসদা। ফাইল চিত্র।
বিস্ময় কাটছে না পর্যটন ব্যবসায়ীদের। তাঁদের আক্ষেপ, কেন এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলেন প্রতিমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন অথচ নীরব রয়ে গেলেন প্রতিমন্ত্রী! পর্যটন উন্নয়নে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা একবারও উল্লেখ করলেন না!
বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে প্রশাসনিক সভায় হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সভায় ডাক পাননি পর্যটন সংস্থা বা হোটেল মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা বন ও ক্রেতা সুরক্ষা প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়ার জন্য পর্যটন সংক্রান্ত ১৫ দফা প্রস্তাব জমা দিয়েছিল ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। পৃথকভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ২১ দফা প্রস্তাব জমা দিয়েছিল পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম টুরিজ়ম’ সংস্থাটিও। বৃহস্পতিবারের সভায় জেলায় হোম স্টে কেন বাড়ছে না তা নিয়ে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে সচেতনতা শিবির করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার জনপ্রতিনিধিদের কারও কিছু বলার আছে কি না বলে যখন মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, তখন কেউই পর্যটনের কোনও প্রস্তাব উত্থাপনই করেননি।
প্রতিমন্ত্রী বিরবাহাকে মুখ্যমন্ত্রী যখন জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমার কিছু বলার আছে?’’ বিরবাহা ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বেতন সংক্রান্ত সমস্যার কথা বলে চুপ করে যান। আর কিছুই বলেননি তিনি। মন্ত্রীর এই নীরবতায় ক্ষুব্ধ পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পর্যটনের প্রস্তাবের বিষয়টি জনপ্রতিনিধি তুলে ধরবেন আশা করেছিলাম। কিন্তু কেউই কিছু বললেন না। সার্বিক কিছু পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। সে বিষয়েই আমরা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা কিছু প্রস্তাব প্রতিমন্ত্রীর হাতে জমা দিয়েছিলাম।’’ হোটেল মালিকদের সংগঠনটি জেলার পর্যটনস্থলের রাস্তাঘাটের উন্নতি, শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা, জেলা শহরে অত্যাধুনিক বিনোদন পার্ক, জলাশয়গুলিতে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা, হস্তশিল্পের সরকারি স্টল, গাডরাসিনি-খাদারানির মধ্যে রোপওয়ে, ঝাড়গ্রামের ইতিহাস সম্বলিত সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো, লালগড় ও রামগড়ের দর্শনীয় স্থানগুলির সংস্কার ও আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার মত নানা প্রস্তাব দিয়েছে।
ঝাড়গ্রাম টুরিজ়মের কর্তা সুমিত দত্ত জানাচ্ছেন, ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভার আগে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে ই-মেল করে প্রস্তাব সমূহ পাঠিয়েছিলেন। সুমিত বলছেন, ‘‘সভায় যাওয়ার সুযোগ পেলে আমরা অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর নজরে বিষয়গুলি আনতে পারতাম।’’ বিরবাহা অবশ্য বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের বিষয়ে আলোচনার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছে জানতে চান। ওই প্রসঙ্গে আমি অস্থায়ী কর্মীদের অনিয়মিত বেতন পাওয়ার সমস্যা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। তারপরে প্রসঙ্গ বদলে যাওয়ায় বলার সুযোগ পাইনি।’’ তবে বিরবাহা জানাচ্ছেন, পর্যটন প্রস্তাবগুলি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘পর্যটন সংস্থার প্রতিনিধিদের আলোচনায় ডেকে তাঁদের কথা শুনব।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রশাসনিকসভায় কারা থাকবেন সেটি নবান্ন ও মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে ঠিক করা হয়।