মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের ছাপ নেই ঘাটালের নার্সিংহোমে

ঘাটালের সুরক্ষা নার্সিংহোম। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ সেখানে গিয়ে দেখা গেল চলছে রোগী ভর্তি। কিন্তু আরএমও কই? নেই। মালিক পুতুল চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘চিকিৎসক সামনেই থাকেন। প্রয়োজনে তাঁকে ডাকলেই চলে আসবেন।’’

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

ঘাটালের সুরক্ষা নার্সিংহোম। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ সেখানে গিয়ে দেখা গেল চলছে রোগী ভর্তি। কিন্তু আরএমও কই? নেই। মালিক পুতুল চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘চিকিৎসক সামনেই থাকেন। প্রয়োজনে তাঁকে ডাকলেই চলে আসবেন।’’

Advertisement

শহরের করুণাময়ী নার্সিংহোমেও একই অবস্থা। সেখানে ঢুকতেই দেখা হয়ে গেল বেশ কয়েকজন নার্সের সঙ্গে। এঁদের মধ্যে ক’জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত? কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করায় চুপচাপ হয়ে গেল পরিবেশ। মালিক জয়ন্ত চক্রবর্তীও বলতে পারলেন না তাঁর নার্সিংহোমে কর্মরত নার্সদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক কতটা।

ঘাটালে ৯০ শতাংশ নার্সিংহোমই ১০-১৫ শয্যার। নিয়মানুযায়ী, ওই সব নার্সিংহোমে অন্তত তিনজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স থাকার কথা। নেই প্রায় কোথাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্সিংহোম মালিক বলেই ফেললেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বুধবারের ঘোষণার পর আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’ তাঁর দাবি, অল্প পুঁজি নিয়ে তাঁদের ব্যবসা। সেখানে মোটা টাকা মাইনে দিয়ে আরএমও, নার্স রাখা সম্ভব নয়। তাই বেকার ছেলেমেয়েদের দু’পাঁচ হাজার টাকা দিয়েই ব্যবসা চালান তাঁরা। ওই মালিকের আশঙ্কা, ‘‘বেশিরভাগই গাঁ-গঞ্জের রোগী। তাই এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। এ বার তো সবাই সতর্ক হয়ে যাবেন!”

Advertisement

একজন আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার), পাঁচটি শয্যা পিছু একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, ওটি-র জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও উপযুক্ত জায়গা, স্টেরিলাইজ্ড ঘর, চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ, দমকল এবং পুরসভা বা পঞ্চায়েতের ছাড়পত্র— এগুলি ছাড়া, কোনও ভাবেই একটি নার্সিংহোম তৈরি হতে পারে না। কিন্তু সে নিয়ম মানে কে?

বুধবার কলকাতায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম গুলির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। তাতেও তেমন হেলদোল নেই। প্রমাণ পাওয়া গেল ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন নার্সিংহোমে ঘুরেই। মাস দুয়েক আগে শিশু পাচার চক্রের হদিস মেলায় নড়েচড়ে বসেছিল স্বাস্থ্য দফতর। ঘাটাল মহকুমার বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে পরিকাঠামো না-থাকার অভিযোগ প্রমাণ হয়। ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিস্টমেন্ট অ্যাক্ট মানতে বাধ্য করতে দু’দফায় সাতটি নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধের নির্দেশও দিয়েছিল জেলা স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু কিছু দিনের বিরতি মাত্র। দু’মাস যেতে না যেতেই স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিয়ে চারটি নার্সিংহোম ফের চালু হয়ে গিয়েছে। বাকি তিনটি অবশ্য এখনও চালু হয়নি।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা জানান, সম্প্রতি ঘাটাল মহকুমার নার্সিংহোমগুলিতে হঠাৎ পরিদর্শন করা হয়েছিল। মালিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। শো-কজ করে একাধিক নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি বন্ধের নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনও বহু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়ম মানছেন না।

তবে অনুমতি পাচ্ছে কী করে?

মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বললেন, “খাতায়-কলমে সব কিছু ঠিকঠাক দেখেই অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পরিদর্শনে গিয়ে নজরে না পড়ায় আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, তাঁরা ঘাটাল-সহ জেলার নার্সিংহোমগুলি ফের পরিদর্শন শুরু করবেন। ত্রুটি নজরে এলেই নার্সিংহোম বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য বললেন, “আমাদেরও তো গাফিলতি রয়েছে। সব জেনে বুঝেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।” তাঁর কথার সুরেই এক নার্সিংহোম মালিকও বলে বসেন, “সংবাদমাধ্যমে যা লেখালিখি চলছে, এ বার টাকা দিয়েও জেলা স্বাস্থ্য ভবন হয়তো অনুমতিও মিলবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement