আশঙ্কা উড়িয়ে আবেগের রথ চলল নির্বিঘ্নেই

আবেগের রথ নির্বিঘ্নে চলবে কিনা, তা নিয়ে বিস্তর চিন্তায় ছিলেন কর্মকর্তারা। দু’আড়াইশো বছরের প্রাচীন রথ তেমন ভাবে সংস্কার হয় না দীর্ঘদিন। তবু নির্বিঘ্নেই গুণ্ডিচা বাড়িতে পৌঁছেছেন মদনগোপাল জীউ, জগন্নাথ দেব, শ্রীধর শালগ্রাম শিলা।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

মহিষাদল শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০০:৪৯
Share:

রশির টানে। নিজস্ব চিত্র।

আবেগের রথ নির্বিঘ্নে চলবে কিনা, তা নিয়ে বিস্তর চিন্তায় ছিলেন কর্মকর্তারা। দু’আড়াইশো বছরের প্রাচীন রথ তেমন ভাবে সংস্কার হয় না দীর্ঘদিন। তবু নির্বিঘ্নেই গুণ্ডিচা বাড়িতে পৌঁছেছেন মদনগোপাল জীউ, জগন্নাথ দেব, শ্রীধর শালগ্রাম শিলা।

Advertisement

ঐতিহ্য আর আবেগের মিশেলেই মহিষাদলের রথযাত্রায় উৎসবের মেজাজ। রাজবাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে দেবতা হলেন সার্বজনীন। মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি এবং রাজবাড়ির যৌথ উদ্যোগে রথ এবং মেলা হচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু অত বড় রথ সম্পূর্ণ সংস্কার হয়নি, তাই ভয়ছিল মনে মনে। এ বারও অনেকেই বলেছেন, টানতে টানতে রথ পূর্ব দিকে হেলে যাচ্ছিল। তাতেই ভয় বাড়ছিল। গত বছর অবশ্য মহিষাদল পঞ্চায়েত সমিতি রথের চাকা সংস্কার করেছিল। দীর্ঘদিনের রোদ-জল রথের জেল্লা নষ্ট করেছে। তবু উৎসবের আবেগ কমেনি। সম্প্রতি রথতলায় একটি টিনের ছাউনি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বুড়ো রথ সেখানেই থাকে। ফি বছর হাজার হাজার মানুষের উল্লাসে, আনন্দ আবেগের বিস্ফোরণে রথ গড়ানো শুরু হয়। কিন্তু এক কিমি দূরে মাসির বাড়িতে রথ যতক্ষণ না-পৌঁছচ্ছে, দম বন্ধ করে বসে থাকেন কর্মকর্তারা। এ বারেও ব্যতিক্রম হয়নি।

একেবারে ছোট থেকেই রথযাত্রায় নিয়ম করে যোগ দেন মহিষাদলের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, পরের বার সর্বাঙ্গীন সংস্কার না-করিয়ে রথ টানা উচিত হবে না। রথ পরিচালন কমিটির সদস্য সঙ্কর্ষণ মাইতি বললেন, ‘‘আশঙ্কে উড়িয়েই রথ ছুটল।’’ অর্থাৎ, আশঙ্কা তাঁর মনেও ছিল।

Advertisement

রাজবাড়ি সুত্রের খবর , ১৭৭৬ সালে রানি জানকী মহিষাদল রাজবাড়িতে রথযাত্রার সূচনা করেন। অন্য একটি মতে ১৮০৪ সালে রাজবাড়ির সদস্য মতিলাল উপাধ্যায় এই রথের সূচনা করেন। ইতিহাসের সরণীতে একাধিক বিবর্তন হয়েছে সেই রথে। বিভিন্ন সময় দেশি-বিদেশি বহু শিল্পী রথ সংস্কারের কাজ করেছেন। ফলে ছোঁয়া লেগেছে নানা দেশের শিল্পের। প্রথমে ১৭ চূড়ার এই রথ তৈরি হয়েছিল ৬০ হাজার সিক্কা ব্যয়ে। ১৮০৭ সালে মহিষাদলের রাজা লক্ষ্মণপ্রসাদ গর্গের আমন্ত্রণে রথ দেখতে আসেন ফ্রান্সের বিখ্যাত ভাস্কর মতিয়েঁ পেরু। তিনি পরামর্শ দেন, ১৭ চূড়ার এই রথে ভারসাম্যের অভাব রয়েছে। চূড়া কমিয়ে দিয়ে ১৩ চূড়া হলে ভাল হয়। তেমনটাই করা হয় এবং বাকি চারটি চূড়ার জায়গায় চারটি ঘোড়া বসানো হয়। বিভিন্ন সময়ে রথের সংস্কারও হয়েছে। একসময়ে বাঙালী শিল্পীদের সঙ্গে রথের কাজ করতে এসেছেন বহু চৈনিক শিল্পী।

ঐতিহ্য মেনেই রথ চলেছে রাজবাড়ির সদস্যাদের উপস্থিততে। রাজবাড়ি সংলগ্ন ছোলাবাড়িতে মেলা বসে। জেলাশাসক রশ্মি কমল জানান, রথে এবং উল্টো রথে বিপর্যয় মোকাবিলা দল হাজির থাকছে। হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, পুলিশ ক্যাম্পও করা হয়েছে। মেলাতেই দেখা হয়ে গেল হলদিয়ার শেখ ইয়াসিন, তমলুকের রবিন সাহুর সঙ্গে। তাঁদের কথায়, এই মেলার জাদুই আলাদা। সে টানেই তো গোটা জেলা থেকে মানুষ আসেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement