সত্যি কি বদলে গিয়েছে ছাত্র-মন! কলেজগুলির অন্দরমহলের খবর কী?

সংঘাতে সংঘর্ষ, শঙ্কাও

সত্যি কি বদলে গিয়েছে ছাত্র-মন! কলেজগুলির অন্দরমহলের খবর কী?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৩
Share:

ডেবরা কলেজের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ফ্লেক্স। নিজস্ব চিত্র

মাস দুয়েক আগে ঘাটাল কলেজে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল টিএমসিপি ও এবিভিপি। সেই সময়ে কলেজের বিদায়ী ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর দোলুইয়ের ছেলে তুফানকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এবিভিপির বিরুদ্ধে। টিএমসিপির পাল্টা মারে এবিভিপির কয়েকজন আহত হন বলেও অভিযোগ। লোকসভা ভোটের পরে ঝিমিয়ে যাওয়া টিএমসিপিকে ওই ঘটনার পরে ফের সক্রিয় হতে দেখা যায়। অন্যদিকে গেরুয়া ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা কিছুটা পিছু হটেন।

Advertisement

লোকসভা ভোটের পরে ছাড়া ছাত্র সংঘর্ষে উত্তপ্ত হওয়া ক্যাম্পাসগুলির মধ্যে ঘাটাল ছাড়াও রয়েছে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ, বেলদা কলেজ, চন্দ্রকোনা রোড কলেজ ও পিংলা কলেজ। রাজ কলেজে টিএমসিপি ও এবিভিপি-র মধ্যে নিয়মিত গোলমাল চলছে। কিছুদিন আগে সেখানে এবিভিপি মিছিল করতে গেলে তাদের জেলা নেতাদের মারধরের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। দিনকয়েক আগে ওই কলেজেই এবিভিপি-র সমর্থক পড়ুয়ারা বিভিন্ন দাবিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি জমা দিতে যান। তখন এবিভিপি-র সমর্থক এক ছাত্রকে টিএমসিপি মারধর করে বলে অভিযোগ। এবিভিপির অভিযোগ, বেলদা কলেজ ও চন্দ্রকোনা রোড কলেজেও তাদের সমর্থকদের টিএমসিপি মারধর করেছে। আরএসএসের এই ছাত্র সংগঠন এবিভিপির ইউনিট তৈরি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছিল পিংলা কলেজেও।

এবিভিপির পতাকার সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিচিতি অবশ্য নতুন নয়। জেলার ছাত্র রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহল জানাচ্ছে, ২০০১ সালেই ঘাটাল কলেজে ইউনিট খুলেছিল এই ছাত্র সংগঠন। তখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিল তারা। ২০১৫ সালের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও চন্দ্রকোনা বিদ্যাসাগর কলেজে প্রার্থী দিয়েছিল এবিভিপি। তবে সংগঠন ধরে রাখতে পারেনি। তাই এ বার লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির ভাল ফলের পরে জেলায় এই ছাত্র সংগঠনের সক্রিয়তা বাড়লেও বাস্তবে তারা কতখানি সফল হবে সেই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

Advertisement

বিভিন্ন কলেজে যাঁদের এবিভিপির কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের অনেকেই প্রথম বর্ষেই পড়ুয়া। ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে সম্যক অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন নেতৃত্ব না পেলে কর্মীদের পরিচালনা করা যে কঠিন সেটা এবিভিপির জেলা নেতৃত্বও আড়ালে মানছেন। তাই মাঝে মধ্যে তালও কাটছে। লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পরে গড়বেতা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে গেরুয়া আবির মাখিয়ে দিয়েছিলেন এবিভিপি কর্মীরা। সেই ঘটনায় জেলার শিক্ষা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।

দুই জেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি কলেজ বাদ দিলে বাকি ক্যাম্পাসগুলিতে এবিভিপিকে এখনও প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি স্বরূপ মাইতির দাবি, ‘‘আমরা নীরবে কাজ করছি। ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘এ বার অনেক ক্যাম্পাসেই গেরুয়া পতাকা উড়বে। দ্রুত শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।’’

বাম আমলের শেষ দিকে বিভিন্ন কলেজে এফএফআই-টিএমসিপির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। সেই সময়ে ছাত্র সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছিল। আবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন অনেক ছাত্র-ছাত্রী। খড়্গপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর কথায়, “আগে টিএমসিপি বললে মিছিলে যেতাম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনও ছাত্র সংগঠনকেই আর ভাল লাগছে না।”

পশ্চিম মেদিনীপুরের এক প্রাক্তন ছাত্র নেতার আক্ষেপ, ‘‘সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা এখন ছাত্র রাজনীতিতে কম আসছেন। তাই যে কোনও ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিতেই বহিরাগতের আনাগোনা বাড়ছে। যেটা ছাত্র রাজনীতির পক্ষে ভাল নয়।’’

সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে না পেলে কিন্তু ক্যাম্পাসে টিকে থাকা যে কোনও ছাত্র সংগঠনের পক্ষেই বেশ কঠিন কাজ।

তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, দেবমাল্য বাগচী, বিশ্বসিন্ধু দে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement