ক্রেনে করে তোলা হচ্ছে হাতি। নিজস্ব চিত্র।
ঘণ্টা তিনেকের ‘অপারেশন’। অনেক কষ্টে শেষমেশ কাবু করা গেল দলমার দলছুটকে।
মেদিনীপুর শহরে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা নাগাদ ঢুকে পড়েছিল একটি হাতি। মাঝরাতে জঙ্গলের ‘অতিথি’কে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করেন বনকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত ক্রেনে করে সেই হাতিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হল জঙ্গলে।
আশপাশের এলাকায় বছরের বিভিন্ন সময়ে হানা দেয় হাতি। কিন্তু খাস শহরে এই ঘটনা প্রথম। সেই অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী থাকলেন শহরের বাসিন্দারা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দলমার জঙ্গল থেকে হাতিটি কাঁসাই নদী পেরিয়ে, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে শহরে ঢুকে পড়েছিল রাতে। তার পর হুলস্থুল পড়ে যায় শহর জুড়ে।
শহরে ঢুকে হাতি তার অবস্থান বদলাতে থাকে। মেদিনীপুর কলেজ চত্বর ঘুরে সে ঢুকে পড়ে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে। শহর থেকে তাকে বার করতে আসরে নামে বন দফতর, পুলিশ এবং হুলা পার্টি। সেই সঙ্গে ভিড় করেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। উৎসাহে অনেকেই অতিসক্রিয় হয়ে ওঠেন। মোবাইলে ছবি এবং ভিডিয়োর মাধ্যমে হাতির ‘স্মৃতি’ ধরে রাখতে শুরু করেন। পুলিশকর্মীরা ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু জনতার উৎসাহ তাতে দমানো যায়নি। তার জেরে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। তাতে বিপদের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাতিটিকে কাবু করেন বনকর্মীরা।
রাত ১১টা ১০ মিনিট নাগাদ মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা হাতিটিকে লক্ষ্য করে ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়েন বনকর্মীরা। তাতে কাবু হয়ে পড়ে হাতিটি। খানিকটা ঝিমিয়ে পড়ে সে। এর পর তার দেহে একটি ঘুমের ইনজেকশন দেন বনকর্মীরা। হাতিটি পড়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় বনবিভাগের বিশেষ গাড়ি ‘ঐরাবত’-এর সাহায্যে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শেষমেশ তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ক্রেনে চড়িয়ে গাড়িতে তোলা হয়।
পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কনজার্ভেটর অব ফরেস্ট অশোক প্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘হাতিটি সকালে ঢুকেছিল। তখন তাকে এক বার জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পর রাতে ফের জঙ্গল থেকে শহরে ঢুকে পড়েছিল কোনও ভাবে। মনে হচ্ছে, শহরে এসে রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিল না। যাই হোক, আমরা ভাল ভাবে ‘অপারেশন’ করেছি।’’ বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দলমার ওই দলছুটকে ছাড়া হবে শালবনির আরাবাড়ির জঙ্গলে।