গত বছর মার্চে কারখানা পরিদর্শনে লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত। ফাইল চিত্র।
রাজ্যের শিল্প-পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষের অন্ত নেই। আর করোনা-কালে দেশ জুড়েই শিল্পক্ষেত্রের আঁধার গাঢ় হয়েছে। এরই মধ্যে খড়্গপুরের একটি শিল্পসংস্থা এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে। গত বছর মার্চে এই শিল্পসংস্থা পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছিলেন লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত। এ বার সেই সংস্থাটিকে সম্মানিত করতে চলেছে লুক্সেমবার্গ সরকার।
খড়্গপুরের রূপনারায়ণপুরে ‘আমর-সিল কেটেক্স’ কারখানায় ইতিমধ্যে পৌঁছেছে এই খুশির খবর। লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূত জিন ক্লড কুগেনার চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থাকে পুরস্কৃত করা হবে। ২০১৫ সাল থেকে লুক্সেমবার্গের সংস্থা ‘আমর-সিলে’র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সংস্থা ‘কেটেক্সে’র যৌথ উদ্যোগে এই কারখানা চলছে। বয়নশিল্পের এই কারখানাটি মূলত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যাটারি সংস্থাকে ‘প্লুরি টেবুলার’ (পিটি) ব্যাগ সরবরাহ করে। একই সঙ্গে অ্যালুমিনিয়াম সংস্থায় ব্যবহৃত তাপ প্রতিরোধক ফাইবার গ্লাসের বুননে তৈরি কাপড় সরবরাহ করে। তবে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি হলেও এই সংস্থা একেবারে দেশীয় প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার করে উৎপাদন করে চলেছে।
খড়্গপুর ছাড়াও দেশে আরও দু’টি কারখানা রয়েছে সংস্থাটির। প্রায় সাড়ে সাতশো কর্মী নিয়ে চলা এই সংস্থা খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকেও সম্প্রসারিত প্রকল্পের নির্মাণ করছে। সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ১৯০কোটির ব্যবসা করা সংস্থাটির কর্মপদ্ধতি দেখে আপ্লুত লুক্সেমবার্গ সরকার এ বার তাদের পুরস্কৃত করতে চলেছে। লুক্সেমবার্গের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ দেশে চলা অন্য সংস্থাগুলিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে ‘আমর-সিল কেটেক্স’। তাতেই এসেছে এই সাফল্য। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুকুমার রায় বলেন, “লুক্সেমবার্গের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সম্মানের খবর পেয়ে আমরা গর্বিত। আমাদের ধারণা যে ভাবে আমরা ছোট কারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আয় বাড়িয়ে চলেছি সেটাই ওঁদের নজর কেড়েছে।’’
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বের বাজারে যেখানে বিভিন্ন সংস্থা আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছে, তখন এই কারখানা আর্থিক উন্নতির পথে এগিয়েছে। কারখানা চালুর পরে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ শতাংশ করে আয়বৃদ্ধি করছে এই সংস্থা। এমনকি করোনার লকডাউনে যখন দেশের অর্থনীতি জোর ধাক্কা খেয়েছে, তখনও এই সংস্থা প্রায় ২৬শতাংশ আয় বৃদ্ধি করেছে। নানা ব্যাটারি, সাবমেরিন, গাড়িতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয় টেক্সটাইল সরবরাহ করেছে এই সংস্থা। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত থাকায় করোনা-কালেও বন্ধ হয়নি উৎপাদন। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শুধু এ দেশ নয়, আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছে লুক্সেমবার্গের মতো ইউরোপের ছোট দেশও।
সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুকুমার জুড়ছেন, ‘‘করোনার সময়েও আমরা লাগাতার উৎপাদন করে আয় বাড়িয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের সংস্থার কারও করোনায় মৃত্যু হয়নি। কর্মী, ইঞ্জিনিয়ার-সহ সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি ব্যক্তির সহযোগিতা লুক্সেমবার্গ সরকারের এই পুরস্কারের দিকে আমাদের এগিয়ে দিয়েছে।”