হলদিয়া

জোটের জেরে জাগছে ছাইচাপা আগুন

তলে তলে যে এতটা আগুন জমা ছিল, ঠাহর করেনি কেউই। বিশেষত তৃণমূল। শুক্রবার হলদিয়ার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের হাতাহাতি সেই ঘটনাকেই সামনে এনে দিল।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৩
Share:

তলে তলে যে এতটা আগুন জমা ছিল, ঠাহর করেনি কেউই। বিশেষত তৃণমূল। শুক্রবার হলদিয়ার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের হাতাহাতি সেই ঘটনাকেই সামনে এনে দিল।

Advertisement

বাম আমলে লক্ষ্ণণ শেঠের হাত ধরে হলদিয়া দখলে রেখেছিল সিপিএম। কিন্তু সময়-চাকা থেমে নেই। ২০০৭ সালের পর থেকে একটু একটু শক্তি হারিয়েছে বামেরা। আর ২০১১ সালে পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের জোয়ার থেকে বাদ যায়নি হলদিয়াও। ইতিমধ্যে বামফ্রন্ট দল থেকে বহিষ্কার করেছে লক্ষ্ণণ শেঠকে। স্বামীর পথ ধরে দল ছেড়েছেন স্ত্রী তমালিকা পণ্ডাশেঠও। সাংগঠনিক অবক্ষয়েই ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচন হোক বা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন–হলদিয়ায় আর দাঁত ফোটাতে পারেনি বামেরা।

কিন্তু ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের ছবিটা অনেকটাই আলাদা। জোট হওয়ায় এ বার গোড়া থেকে শক্তি বেড়েছে বাম ও কংগ্রেসের। তার উপর বৃহস্পতিবারই কলকাতায় এসে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার নসিম জৈদী খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শো-কজের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জোটের শক্তি আরও বেড়েছে। আর সূর্যকান্ত মিশ্র তো প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেনই। জেলার রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ঠিক এই কারণেই হলদিয়ার মতো তৃণমূলের দাপটের এলাকাতেও দাপট দেখাতে পারছে বামেরা।

Advertisement

শুক্রবার এই প্রতিরোধেই তো অগ্নিগর্ভ হয়ে গিয়েছিল হলদিয়ার পরিস্থিতি। হলদিয়ার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে জোট, তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা ছিল। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন হলদিয়ার সিপিএম প্রার্থী তাপসী মণ্ডল। সেই সময় মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের প্রবেশপথের বাইরে পথসভা করছিল সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন মহিষাদলের তৃণমূল প্রার্থী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার। সেই সময় পুলিশ সিপিএম নেতা-কর্মীদের সভা বন্ধ করতে বলেন। সিপিএম কর্মীদের বোঝাতে যান সুতাহাটা থানার ওসি শীর্ষেন্দু দাস। অভিযোগ, এ নিয়ে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের বচসা বাধে। অভিযোগ, সেই সময় সামসুদ্দিন শাহ নামে এক সিপিএম সমর্থক সুতাহাটা থানার ওসির গায়ে হাত তোলেন। তারপরেই পুলিশ সিপিএম সমর্থকদের হঠাতে লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। ওসিকে মারার অভিযোগে সামসুদ্দিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোলমালের জেরে প্রথমে পিছু হঠে সিপিএম। পরে তাঁরা রুখে দাঁড়ায়। তারপরে সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের গোলমালে এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। গণ্ডগোলের সময় হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায়ও আহত হন বলে অভিযোগ। বিশাল পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হলদিয়ার বালার মোড়ের বাসিন্দা সামসুদ্দিন হলদিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এবং এসএফআই এর জেলা কমিটির সদস্য। শনিবার তাঁকে হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে চার দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। হলদিয়ার এসডিও পূর্ণেন্দু নস্কর জানান, গোটা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।

পূর্বে মেদিনীপুরে বিধানসভা ভোট রয়েছে আগামী ৫ মে। আর ভোটের আগে এমন ঘটনার জেরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। তৃণমূল প্রার্থী মধুরিমা মণ্ডলের জন্য জোর কদমে প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। দলের কর্মীদের সংগঠিত করতে কোমর বেঁধেছেন খোদ সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। ঘন ঘন বৈঠক করছেন দলের কর্মীদের নিয়ে। হলদিয়া বিধানসভা হাতছাড়া হলে মুখ পুড়বে শাসকদলের। এমন পরিস্থিতিতে সিপিএমের জেলা নেতা পুলকেশ মিশ্র বলেন, ‘‘তৃণমূল ভয় পেয়েছে। তাই আমাদের ভয় দেখাতে চাইছে । কারখানায় যারা কাজ করছেন তাদের কাজ কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখানো হচ্ছে। আমরা জানি মানুষ প্রতিরোধ করবেন।’’ একই কথা সিপিএম জেলা নেতা শ্যামল মাইতির গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘বাধা এলেই প্রতিরোধ হবে। সিপিএমের তরণ প্রজন্ম দাঁতে দাঁত চেপে লড়তে জানে।’’

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএমের এ ভাবে রুখে দাঁড়ানো অশনি সঙ্কেত তৃণমূলের কাছে। তাই ধমক-চমক শুরু করে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। হলদিয়া শহর তৃণমূল সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, ‘‘সিপিএম মনে করেছে মিডিয়া এবং কমিশন ভোট বৈতরণী পার করবে। ২০১১তে জেতার পর আমরা দিদির কথা মতো রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিয়েছিলাম। কিন্তু সিপিএম রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে চায়না ওরা অন্য কিছু চায়।’’ হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডলও বলেন, ‘‘হলদিয়া জুড়ে উন্নয়ন হয়েছে। সিপিএম হার নিশ্চিত জেনে অশান্তি তৈরি করতে চাইছে।’’ সুতাহাটার তৃণমূল নেতা আনন্দময় অধিকারীরও হমকি, ‘‘সিপিএম পাটকেল ছুড়লে আমরা বাতাসা ছুড়ব না। আমরাও কবিরাজি ওষুধ জানি।’’

এমন কথায় অবশ্য আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে না বামেরা। উল্টে বামেদের সরস মন্তব্য, স্থির জলে কাঁপুনি লেগেছে তা হলে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement