Swasthya Sathi

স্বাস্থ্যসাথীতেও মিলল না চিকিৎসা, অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ

কোলাঘাটের কোলা গ্রামের বাসিন্দা সমর মাইতি (৫৮) পুরাতন বাজার এলাকায় ফুটপাথে ফল বিক্রি করতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৭:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিনে পয়সায় চিকিৎসা সুবিধা পাইয়ে দিতে রবিবার ছুটির দিনেও ভিন জেলায় গিয়ে রোগীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরি করে দিয়েছিলেন কোলাঘাটের বিডিও। সেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখার পরেও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠল বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। রাতারাতি রোগীকে রেফার করা হয় অন্যত্র। মেটাতে হয়েছে নার্সিংহোমের মোটা বিল। কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন রোগী। যা ফের একবার রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Advertisement

কোলাঘাটের কোলা গ্রামের বাসিন্দা সমর মাইতি (৫৮) পুরাতন বাজার এলাকায় ফুটপাথে ফল বিক্রি করতেন। স্ত্রী অনিমাও আনাজ বিক্রি করতেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে পিউ দশম শ্রেণির ছাত্রী। ভাড়া বাড়িতে থাকতেন সমর। তীব্র শ্বাসকষ্ট ও কিডনির সমস্যা হওয়ায় সমরকে গত শনিবার রাতে উলুবেড়িয়ার সেবাব্রত হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করে পরিবারের লোকজন। পরিবারের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমরের ডায়ালসিস-সহ যাবতীয় চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেন। দুঃস্থ পরিবারটি যাতে বিনে পয়সায় চিকিৎসা পরিষেবা পায় সে জন্য রবিবার ওই নার্সিংহোমে হাজির হন কোলাঘাটের বিডিও মদন মণ্ডল। সেখানেই স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড রোগীর পরিবারের হাতে তুলে দেন বিডিও।

সমরের পরিবারের অভিযোগ, বিডিও হাসপাতাল থেকে ফিরে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড দেখে সেবাব্রত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।তাঁরা রাজি না হওয়ায় বিডিওকে ফোনে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি খরচ হবে রোগীকে বাঁচাতে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডের কথা শুনলে চিকিৎসা করবেন না। কিন্তু এর পরেও সমরের পরিবার চিকিৎসায় অনড় থাকলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ রোগীকে আইসিইউ থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ। রবিবার বিকেলে গুরুতর অসুস্থ সমরকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পরিবারের লোকজন। হাসপাতাল ছেড়ে আসার আগে শয্যার ভাড়া, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ফি, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্য নগদ ৪৫ হাজার টাকা তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়েছে বলে রোগীর পরিবারের দাবি।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত বিডিওর উদ্যোগে রোগীকে রবিবারই ভর্তি করা হয় তমলুক জেলা হাসপাতালে। সোমবার সেখানে মারা যান সমর। পরিবারের অভিযোগ স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড দেখেই সেবাব্রত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর চিকিৎসা থেকে সরে দাঁড়ায়। মৃতের বড় মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘বাবার ডায়ালসিসের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যখনই আমরা স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড দেখালাম তখনই ওরা আমার বাবাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। বিনা চিকিৎসাতেই বাবার মৃত্যু হয়েছে। উল্টে আমাদের দিতে হয়েছে নগদ ৪৫ হাজার টাকা। বিডিও আমাদের জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। তবু প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’

কোলাঘাটের বিডিও মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘খুবই খারাপ লাগছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও ওই বেসরকারি হাসপাতাল কোনও সুবিধাই দেয়নি সমর মাইতিকে। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা যায় কিনা খতিয়ে দেখছি।’’

সেবাব্রত হাসপাতালের ডিরেক্টর দীপক দাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমাদের কিডনির চিকিৎসক না থাকায় ওই রোগীকে রেফার করতে হয়েছে। কাউকে রেফার করলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে কোনও সুবিধা দেওয়া যায় না। তাই নার্সিংহোমের বিল রোগীর পরিবারকে নগদে মেটাতে হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement