প্রতীকী ছবি।
বিয়ের সময় বরপক্ষের দাবিমত এক লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়েছিলেন তাঁরা। শ্বশুরবাড়িতে সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু গোল বাধল সম্তান জন্মানোর পর। মেয়ে হওয়ায় আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা পণ চাওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা না দেওয়ায় শুরু হয় বধূ নির্যাতন। কয়েক বছর পর দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে। সস্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে গ্রামবাসীদের মধ্যস্থাতেও সমস্যা মেটেনি। উল্টে অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। বাধ্য হয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে দুই মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে ঠাঁই নিয়েছেন মহিলা।
রামনগর থানার নীলকণ্ঠপুরের ওই ঘটনায় পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতা। কন্যা সন্তান হওয়ায় এবং অতিরিক্ত পণের দাবিতে তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হত বলে মহিলা স্বামী এবং শ্বশুর-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। দুই নাবালিকা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আপাতত প্রশাসনের সুবিচারের আশায় দিন গুনছেন মিনতি সাউ নামে ওই গৃহবধূ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর ১২ আগে রামনগর থানার পালধুই গ্রামের বাসিন্দা তপন সাউয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় নীলকন্ঠপুরের মিনতি রণজিৎ-এর। চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে কাজ করতেন তপন। বিয়ের কিছুদিন পর তিনি চেন্নাইয়ের হোটেলের কাজ ছেড়ে দিঘায় চলে আসেন। সেখানে একটি হোটেলে কাজ করতে শুরু করেন। পরে সেই কাজ ছেড়ে নিউ দিঘায় একটি খাবারের দোকান করেন। ইতিমধ্যেই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান জন্মায়। মিনতি দেবীর অভিযোগ, ‘‘বিয়ের সময় এক লক্ষ টাকা পণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মেয়ে হওয়ার জন্য এবং মোটরবাইক কিনতে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে স্বামী দাবি করে। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় শুরু হয় শারীরিক অত্যাচার।’’ তাঁর দাবি, বাপের বাড়ির লোকজন ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে নিয়ে সালিশি সভা হলেও কোনও মীমাংসা হয়নি।
ইতিমধ্যে দম্পতির আরও একটি কন্যা সন্তান জন্মালে তাঁর উপরে অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে বলে মিনতির দাবি। তিনি বলেন, ‘‘মারধর খেলেও দুই মেয়ের মুখ চেয়ে কোনও রকমে শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম। কিন্তু পরে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে স্বামীর সম্পর্কের কথা জানতে পারি। দু’জনের কিছু ছবিও আমার হাতে আসে। স্বামীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেই মারধর করত। মারের চোটে একবার হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, তপন রোজ বাড়ি ফিরত না। কিন্তু মাঝেমধ্যে এলেই মারধর করত। দিঘায় কোথায় স্বামী থাকে তাও তিনি জানতেন না। যোগাযোগের মোবাইল নম্বরও বদলে ফেলে স্বামী।
মিনতির অভিযোগ, গত ৩১ মে শ্বশুর হরেকৃষ্ণ সাউ ইট দিয়ে মেরে তাঁর মাথায় মারেন। শ্বশুরবাড়ির আশপাশের লোকেরা তাঁর বাপের বাড়িতে খবর দেয়। বাপের বাড়ির লোকেরা তাঁকে নিয়ে যান। রামনগর থানায় গত ৫ জুন অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
মিনতিদেবীর দাদা ধনঞ্জয় রনজিৎ বলেন, “বোন ও দুই নাবালিকা ভাগ্নি এখন আমাদের বাড়িতেই রয়েছে। এক জনের বয়স এগারো। আর একজনের বয়স মাত্র আট। নিরাপত্তার অভাবে বোনকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে পারছি না। কিন্তু এ ভাবে কতদিন? পুলিশকে জানালেও এখনও অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।’’
যদিও হরেকৃষ্ণ সাউ বৌমার উপর নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “বৌমা মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমার ছেলে বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ।’’
রামনগর থানার পুলিশের দাবি, অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে অভিযুক্ত তপন গা ঢাকা দিয়েছে। তার খোঁজ চলছে। শীঘ্রই তাকে গ্রেফতার করা হবে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।