bank

ব্যাঙ্কে নিয়োগে স্বজনপোষণ!

এই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। পরিচালন সমিতির অন্য সদস্যেরাও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:৪৩
Share:

প্রতীকী চিত্র। ছবি:শাটারস্টক

বিদ্যাসাগর কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগ ঘিরে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠল। সম্প্রতি ওই ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগ হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের কারও বাবা তৃণমূলের বিধায়ক, কারও মা বিদায়ী কাউন্সিলর। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রকৃত যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তৃণমূল-যোগেই দেওয়া হয়েছে চাকরি। ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, অভিযোগ ভিত্তিহীন। নিয়ম মেনেই কর্মী নিয়োগ হয়েছে।
এই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী। পরিচালন সমিতির অন্য সদস্যেরাও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সম্প্রতি এই ব্যাঙ্কের ২৯টি পদে কর্মী নিয়োগ হয়েছে। ব্যাঙ্কে যাঁরা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মৌমিতা ঘোষ, সিদ্ধার্থ মণ্ডল, নবনীতা দাস অধিকারী প্রমুখ। মৌমিতা নারায়ণগড়ের তৃণমূল বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষের মেয়ে। সিদ্ধার্থ মেদিনীপুরের একটি ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তৃণমূলের শিপ্রা মণ্ডলের ছেলে। নবনীতা মেদিনীপুরের একটি ওয়ার্ডের তৃণমূল সভাপতি শক্তিপদ দাস অধিকারীর মেয়ে। এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরই স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠছে। যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, ‘‘তৃণমূলের ঝান্ডাধারীরা ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছেন। প্রকৃত যোগ্যরা বঞ্চিত হয়েছেন।’’ সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক সুমিত অধিকারী বলেন, ‘‘তৃণমূল আমলে তো এটাই হচ্ছে। মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই হিসেবে এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বলতে পারেন, এটাই রীতি!’’ যুব বিজেপির জেলা সভাপতি আশীর্বাদ ভৌমিক বলেন, ‘‘আশ্চর্যজনকভাবে তৃণমূল ঘনিষ্ঠদেরই এই ব্যাঙ্কে চাকরি হচ্ছে।
ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, নিয়মানুযায়ী শুরুতে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। পরে লিখিত পরীক্ষা হয়েছে। সফলদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল। তারপর চূড়ান্ত প্যানেল তৈরি হয়েছে। ব্যাঙ্কের ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘যে সব অভিযোগ করা হচ্ছে, সবই মিথ্যা। কোথাও কোনও অনিয়ম হয়নি।’’
বিরোধীরা স্বজনপোষণের অভিযোগ তুললেও তৃণমূল নেতৃত্বের জবাব, নিয়োগ হয়েছে যোগ্যতার ভিত্তিতেই। নারায়ণগড়ের তৃণমূল বিধায়ক প্রদ্যোত বলেন, ‘‘আমার মেয়ে যোগ্যতার নিরিখেই চাকরি পেয়েছে।’’ শহরের বিদায়ী কাউন্সিলর তৃণমূলের শিপ্রা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার ছেলে তো আপার প্রাইমারিতেও ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল।’’ তৃণমূল নেতা শক্তিপদ দাস অধিকারী বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল করি বলে কি আমার মেয়ে চাকরি পেতে পারে না? যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁরা তো কারও না কারও ছেলেমেয়ে।’’
নিয়োগ ঘিরে তৃণমূলের অন্দরেও যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তা স্পষ্ট। শহরের এক তৃণমূল কর্মী সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘মেদিনীপুরের একটি ব্যাঙ্কে দু’বার পরীক্ষা দিলাম। দু’বারই যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু এমন অনেকে পেল, তাদের দেখে আরও ভাল পড়ার জেদ বেড়ে গেল। সততার উজ্জ্বল নিদর্শন’।
অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বছর চারেক আগেও এই ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগ ঘিরে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছিল। সে ক্ষেত্রেও এই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। বছর চারেক আগের সেই নিয়োগপর্বে এই ব্যাঙ্কে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন পূজা হাজরা, সুশোভন মাইতি, শুভজিৎ বসু প্রমুখ। পূজা জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরার মেয়ে। সুশোভন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক দীনেন রায়ের ‘ছায়াসঙ্গী’ বলে পরিচিত। শুভজিৎ মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রণব বসুর ভাইপো।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement