সিপিএম কর্মীকে মারধরের অভিযোগ

ফের কাঠগড়ায় শাসক ঘনিষ্ঠ সিভিক ভলান্টিয়ার

আগেই অভিযোগ উঠেছিল, ভোটারদের সঙ্গে আধা-সেনার কথাবার্তা রেকর্ড করে শাসক দলের নেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। কখনও আবার সরাসরি তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে শাসকের মিছিলে সামিল হতেও দেখা গিয়েছে তাদের।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০২:৫১
Share:

মূল অভিযুক্ত আশিস হাজরা (বঁা দিকে), ঘটনার পর পুলিিশ টহল গ্রামে (ডান দিকে)। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

আগেই অভিযোগ উঠেছিল, ভোটারদের সঙ্গে আধা-সেনার কথাবার্তা রেকর্ড করে শাসক দলের নেতাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। কখনও আবার সরাসরি তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে শাসকের মিছিলে সামিল হতেও দেখা গিয়েছে তাদের। সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভোটের কাজে লাগানোয় স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

এ বার সিপিএম কর্মীকে মারধরের ঘটনায় জড়িয়ে গেল ঘাটালের এক সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই যুবকের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ রয়েছে। এমনকী তাঁর পেশাকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের হুমকি দিচ্ছে শাসকদল। তৃণমূল যোগের কথা এক প্রকার স্বীকার করে নিয়েছেন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার আশিস হাজরাও।

সোমবার সকালে ঘাটাল থানার রামচক মোড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সিপিএম কর্মী কানাই হাজরাকে। স্থানীয় বাসিন্দারাই তাঁকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। এলাকার বাসিন্দা, পেশায় দিন মজুর কানাইবাবুর নেতৃত্বে বেশ কিছু দলীয় পতাকা লাগানো হয়েছিল গ্রামে। অভিযোগ, তখন থেকেই নানা রকম হুমকি আসছিল। এমনকী রবিবার পতাকা খুলে ফেলার নির্দেশও দেওয়া হয়। প্রতিবাদ করেছিলেন কানাইবাবু। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, সেই প্রতিবাদের ফলই ভুগতে হল তাঁকে।

Advertisement

সিপিএমের তরফে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার আশিস হাজরার নামে ‘সমাধান’ অ্যাপে নির্বাচন কমিশনের কাছে এবং লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু সোমবার বিকেল পর্যন্ত আশিসবাবুকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। যদিও তাঁকে দেখা গিয়েছে গ্রামেই। এমনকী আনন্দবাজারের সঙ্গে কথাও বলেছেন তিনি। জোর গলায় আশিস দাবি করেছেন, “আমি মেরেছি। মদ খেয়ে গ্রামের মানুষকে গালাগালি করছিল, তাই মেরেছি। সঙ্গে স্বদেশদাও ছিলেন।”

এই ‘স্বদেশদা’ হলেন রামচক বুথের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা স্বদেশ মণ্ডল। তিনি কিন্তু ঘটনার পর থেকেই এলাকাছাড়়া। যদিও অভিযোগ, আশিসকে দেখতে পেয়েও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এ দিন দুপুরে ঘটনার পরেই গ্রামে যায় পুলিশ। তাদের সামনেই অভিযুক্ত স্ত্রীকে মোটর বাইকে চাপিয়ে স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কে ঢুকে পড়েন আশিস। জেলা পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে। তদন্তের পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্তও চলছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘাটালের মহকুমাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “সমাধানের মাধ্যমে করা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশকে বলা হয়েছে।”

হাসপাতালে শুয়ে বছর পঞ্চাশের কানাইবাবু জানান, মনসুকা পঞ্চায়েতের রামচকে তাঁর বাড়ি। এ দিন সকালে কাজের জন্য পাশের গ্রাম দৌলতচক যাচ্ছিলেন। রামচকে গ্রামের মোড়ে তৃণমূল নেতা স্বদেশ মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে আশিস পথ আটকায়। কানাইবাবুর অভিযোগ, ‘‘আশিস আমার ছেলের মতো। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই শুরু হয় মারধর। রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে মেরে আমার মুখ ফাটিয়ে দেয়। কোমর ও হাতেও আঘাত লাগে। তারপর গলা টিপে ধরেছিল। আশপাশ থেকে মানুষ ছুটে এলে আমাকে ফেলে ওরা পালায়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরার সাফ কথা, “কানাইবাবুর অবস্থা ভাল না। তাঁর সঙ্গে কথা বলে আমরা অভিযোগ দায়ের করেছি। নির্দিষ্ট অভিযোগের পরেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি।”

মনসুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের রামচক গ্রামে গিয়ে সোমবারও দেখা গেল উড়়ছে সিপিএমের পতাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানালেন, কানাইবাবু ভাল মানুষ। স্থানীয় রাজনীতিতে বাম-মুখ হিসাবেই তিনি পরিচিত। গ্রামেরই বাসিন্দা তৃণমূলের এক কর্মীও অকপটে স্বীকার করেছেন, “কানাইদা দীর্ঘদিন মিটিং-মিছিলেও নেতৃত্ব দেন। এ বারও তাই করছিলেন। আশিস যেহেতু পুলিশের লোক। তাই তাকে কেউ কিছু বলবে না, এই ভেবেই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। এতে আমারও ক্ষুব্ধ।”

অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের গোটা পরিবার তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত। তার উপর আশিসবাবু সরাসরি স্বদেশ মণ্ডলের নাম করায় অস্বস্তিতে তৃণমূলও। এর আগে ঘাটাল থানারই বাড়ানন্দি, মেটালা, খড়কপুর-সহ একাধিক গ্রামে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে ভোটারদের হুমকি, দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করার অভিযোগ উঠেছিল। সিপিএমের তরফে নির্দিষ্ট অভিযোগও হয়েছে। আপাতত স্থানীয় শাসক নেতৃত্ব এ বিষয়ে মন্তব্য করছে সাবধানে। ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ মাঝি বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি নিন্দনীয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement