রাত আটটা। খড়্গপুরের মালঞ্চ রোডের ধারে একটি মদের দোকানে গিয়েছিল খরিদার বছর ষোলোর কিশোর সনু কুমার (নাম পরিবর্তিত)। সঙ্গে সমবয়সী আরও কয়েকজন। মদ চাইতেই দোকানি প্রশ্ন করলেন, “বয়স হয়েছে তো?” সনুর জবাব, “আমার হয়নি, বন্ধুর হয়েছে। ভোটার কার্ড দেখাবে?” তবে ভোটার কার্ড আর বের করতে হয়নি। তার আগেই হাতে চলে এসেছে বিলিতি মদের বোতল।
রেলশহরেই ভবানীপুর মাঠপাড়া পেরিয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি পানশালায় সকাল-সন্ধ্যা ভিড় লেগেই রয়েছে। দিন তিনেকে আগেই রাজগ্রাম এলাকার পাঁচজন অল্পবয়সী ছেলে সেখানে গিয়েছিল। সেই দলে দু’জনের বয়স সতেরোও নয়। তারপরেও অবশ্য পানশালার টেবিলে বসে দিব্যি মদ্যপান করেছে তারা। শুধু সে দিন নয়, হামেশাই ওই পানশালায় মদ্যপান করতে আসে ওই অপ্রাপ্তবয়স্করা।
মদের আসরের ঝগড়া থেকে ক্লাস নাইনের সহপাঠীকে খুনের ঘটনায় ক’দিন আগেই তোলপাড় হয়েছে। নদিয়ার ওই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে নাবালকদের হাতে চলে আসছে মদ-সহ অন্য নেশার জিনিস! নিয়ম বলছে, একুশ বছরের কম বয়সী কাউকে মদ বিক্রি করা যাবে না। এই মর্মে নোটিস বার ও মদের দোকানে ঝোলানোও বাধ্যতামূলক। কিন্তু সে সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান ও পানশালা থেকে নাবালকদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে মদের বোতল। অনেক ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে মদ কিনিয়ে পরে সেই বোতল নিয়ে নিচ্ছে নাবালকরা। নেশায় বুঁদ হয়ে তারা নানা অপকর্মও ঘটাচ্ছে। কখনও হেলমেট ছাড়া বেপরোয়া ভাবে বাইক চালাচ্ছে তারা, কখনও বা পথচলতি কিশোরী-তরুণীর উদ্দেশে ছুড়ে দিচ্ছে অশ্লীল মন্তব্য।
মদ দোকানিদের অবশ্য দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনেই মদ বিক্রি করছেন। মালঞ্চর এক মদ দোকানের মালিক সন্দীপ ভাল্লার কথায়, “অনেক তরুণ আমাদের দোকানে আসে। বাড়ির বড়দের জন্য মদ কিনতে চায়। কিন্তু দেখে যদি মনে হয় তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাহলে আমরা মদ বিক্রি করি না।’’ শহরের গোলবাজারের একটি পানশালা ও মদ দোকানের মালিক আশিস দে-রও বক্তব্য, “আমার মনে হয় না কোনও মদের দোকানের মালিক অপ্রাপ্তবয়স্কদের মদ বিক্রি করে। তবে এটাও ঠিক যে বহু অপ্রাপ্তবয়স্ক মদ্যপান করছে। যতটা সম্ভব এ সব রোখার চেষ্টা করি।”
অবশ্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যে টাকার লোভে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-ছোকরাদের মদ বিক্রি করছে তা মানছেন সবাই। পুলিশ ও আবগারি দফতর যথেষ্ট সক্রিয় না হওয়াতেই এমন কাণ্ড ঘটছে বলে অভিযোগ। যদিও খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডলের দাবি, “নিয়মিত ধরপাকড় চলে। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্কদের তো গ্রেফতার করা যায় না। বাড়ির লোকেদের ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।’’ জেলার আবগারি দফতরের সুপার সুব্রত দাশগুপ্তেরও বক্তব্য, “প্রতিটি মদের দোকানে ধারাবাহিক অভিযান চলে। একুশ বছরের কম বয়সীদের মদ বিক্রি নিষিদ্ধ বলে প্রতিটি দোকানের বাইরে বিজ্ঞপ্তিও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও যদি এমন কোনও অভিযোগ আসে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব।’’