ঠিকা শ্রমিকদের চুক্তির নবীকরণ নিয়ে অশান্তি

বন্দর প্রশাসন ও বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর হলদিয়া বন্দরে কর্তব্যরত ৩৩টি ঠিকাদার সংস্থার বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৩
Share:

হলদিয়া বন্দর। নিজস্ব চিত্র

চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে অন্তর্ভুক্তির দাবি ঘিরে অশান্তি দেখা দিয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল থেকে হলদিয়া বন্দর ও বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ভবন জওহর টাওয়ারের সামনে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিকদের একাংশ। এমনকী বেশকিছু চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে কর্তব্যরত অবস্থায় মারধরের অভিযোগও উঠেছে। গোটা ঘটনায় শাসকদলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী নামাতে বাধ্য হন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর প্রশাসন ও বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর হলদিয়া বন্দরে কর্তব্যরত ৩৩টি ঠিকাদার সংস্থার বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। তারপরেও ওইসব ঠিকাদার সংস্থাকে আগামী কয়েক মাস বন্দরের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। যদিও এদিন ঠিকাদারদের একাংশ কাজের বরাত নিতে রাজি হয়নি। এমনকী তারা নিজেদের অধীনস্থ শ্রমিকদের কাজ করতে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানায়নি। তা সত্ত্বেও কিছু ঠিকাশ্রমিক এদিন বন্দরে কাজ করতে যান। অভিযোগ, শাসকদলের নাম করে ওই সব শ্রমিককে কাজে যেতে বাধা দেওয়া হয়। এমনকী বন্দরের ক্যান্টিন সহ একাধিক জায়গায় কর্মরত কয়েকজন ঠিকাশ্রমিককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে যায় কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা রক্ষীবাহিনী। তারপর বহিরাগতরা এলাকা ছেড়ে পালায়।

Advertisement

বন্দর সূত্রে খবর, হলদিয়া বন্দরে ৮৩৫ জন ঠিকা শ্রমিক এবং ১০৭ জন নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। এঁরা মূলত ঠিকাদারদের মাধ্যমে বেতন পেতেন। কিন্তু ওইসব ঠিকাদারের চুক্তির মেয়াদ গত ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপর দুই ধাপে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। শেষ চুক্তির মেয়াদ গত সোমবার শেষ হয়েছে। তারপর থেকে ওইসব ঠিকাদারদের উপর পুরনো চুক্তিতে কাজ না করার জন্য শাসকদল চাপ বাড়াচ্ছিল বলে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ। যদিও এ ব্যাপারে কোনও ঠিকাদার মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে বন্দরের গেটে এবং জওহর টাওয়ারের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে ঠিকাশ্রমিকদের একাংশ। তাঁরা হলদিয়া পুর চেয়ারম্যান এবং বন্দরের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা শ্যামল আদকের অনুগামী বলে জানা গিয়েছে। এ ব্যাপারে শাসক দল সমর্থিত কলকাতার ডক কমপ্লেক্স পার্মানেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘পুরনো চুক্তিতে ঠিকাদারেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। তাই নতুনভাবে চুক্তি কার্যকর করার দাবি জাননাতেই এদিন কাজ করেননি তাঁরা। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

শাসক দল সমর্থিত আরেকটি শ্রমিক সংগঠন হলদিয়া ডক কমপ্লেক্স কন্ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ পাত্রের দাবি, ‘‘সোমবার অনেকেই কাজ করতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন। আমরা চাই বন্দরের কাজ চালু রেখে ঠিকা চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলন হোক। এভাবে অশান্তি করলে বন্দরে ক্ষতি হব।’’ ভারতীয় মজদুর সংঘের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ কুমার বিজলির দাবি, ‘‘ঠিকাশ্রমিকদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে শাসক দল। বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে শ্রমিকেরা কাজ করলে তাঁরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। আসলে এতে তৃণমূলের কাটমানি বন্ধ হয়ে যাবে বলেই আতঙ্কিত হয়ে ওরা গন্ডগোল পাকাতে চাইছে।’’

হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসনিক) অমল কুমার দত্ত জানান, নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ঠিকাশ্রমিকরা নিজেদের দাবি-দাওয়াল বিক্ষোব করায় সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা রক্ষীবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।’’ যদিও এদিন অশান্তির জেরে বন্দরের কাজকর্মে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি বলে বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement