Partha Chatterjee

Partha Chatterjee: আগে জেনেই কি পার্থকে জেলায় আসতে মানা!

গত মে মাসে ঝাড়গ্রামে এক দলীয় সভায় রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষকে জেলার সংগঠন দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ০৬:১৮
Share:

ফাইল চিত্র।

দলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে কি আগেই আঁচ পেয়েছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব? গত মে মাসে ঝাড়গ্রামে এক দলীয় সভায় রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষকে জেলার সংগঠন দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। পুরভোটের পরে পার্থের ঝাড়গ্রামে আসা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর গ্রেফতারির পরে বিষয়টি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম পুরভোটের টিকিট ও পদ বিলিতে কার্যত পার্থই ছিলেন সর্বেসর্বা। অথচ সেই পার্থকেই পুরবোর্ড গঠনের পরে ঝাড়গ্রাম জেলার সাংগঠনিক দায়িত্বে আর সেভাবে দেখা যায়নি। তাঁকে সরিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলার পর্যবেক্ষক পদে কাউকে আনা হয়নি ঠিকই। তবে বেশ কিছু ইঙ্গিতবাহী ঘটনা ঘটছিল। গত মে মাসে মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের আগে ঝাড়গ্রামে দফায় দফায় প্রস্তুতি বৈঠক করতে এসেছিলেন পাশের জেলার মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। পার্থ আসেননি কেন? ওই সময়ে তৃণমূলের একাংশ নেতা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে সিবিআই তলব করায় অস্থায়ী ভাবে সংগঠন দেখছেন মানস। ১৯ মে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর দলীয় সভার পরে ধোঁয়াশা আরও বেড়েছিল। ওই দিন মানসের পাশাপাশি হাজির ছিলেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ঘোষ। সেখানেও ছিলেন না পার্থ। সভা শেষে জেলার নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে তন্ময়ের পরিচয় করিয়ে দেন মমতা। তন্ময়কে জেলায় এসে বৈঠকও করার নির্দেশ দেন নেত্রী। তারপরে তন্ময় জেলায় এসে বার কয়েক বৈঠক করেছেন। একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি বৈঠকও করতে আসেন তিনি। এছাড়া কুণাল ঘোষ, সায়নী ঘোষ, সোহম চক্রবর্তীদের মতো নেতা-নেত্রীরা একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি কর্মসূচিতে ঝাড়গ্রামে এলেও পার্থ আসেননি।

তৃণমূলের এক সূত্রের খবর, পুরভোটের পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে পার্থকে জঙ্গলমহলের জেলায় আসতে বারণ করা হয়। ঝাড়গ্রামের এক বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা মানছেন, ‘‘মহাসচিব পুরভোটের টিকিট বিলি এবং পুরবোর্ড গঠনের সময়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। পুরভোটের সাংগঠনিক কর্মিসভা ও প্রচারে বার দু’য়েক এসেছিলেন। তারপর তাঁকে জেলায় যেতে বারণ করা হয়েছিল বলে শুনেছি। সেটা সত্যি কি-না জানা নেই। তবে মহাসচিব আর আসেননি। তারপর থেকে প্রথমে মানস ও পরে তন্ময়ই কার্যত সাংগঠনিক সভা করতে জেলায় এসেছেন।’’ ওই সূত্রেই জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটের পর থেকেই পার্থ ঘনিষ্ঠ জেলার কয়েকজন নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন। জেলায় পার্থের কর্মসূচিতেও অবশ্য তাঁরা হাজির থাকতেন। পার্থ ঝাড়গ্রাম আসার সময়ে ওই নেতাদের কেউ কেউ কোলাঘাটের একটি নামী রেস্তোরাঁয় পৌঁছে তাঁর জন্য অপেক্ষাও করতেন। কার্যত ভারসাম্য বজায় রেখেই চলছিলেন তাঁরা। পার্থের গ্রেফতারির পরে ওই নেতারা ঘনিষ্ঠমহলে দাবি করছেন, দলের মহাসচিবকে এড়িয়ে চলা তো সম্ভব নয়। তাই তিনি ডাকলে যেতে হত।

Advertisement

জেলা তৃণমূলের নানা স্তরে এখন পার্থ বিরোধী ক্ষোভ সামনে আসতে শুরু করেছে। তৃণমূলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও পার্থ ঘনিষ্ঠ নেতা-নেত্রীদের নাম না-করে তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা আদায়, গরুপাচার, জমি কেনা বেচা, স্পঞ্জ আয়রন কারখানা থেকে মাসোহারা, মাওবাদী প্যাকেজের বিনিময়ে টাকা আদায়, গ্রুপ ডি, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলে পোস্ট দিচ্ছেন একাংশ কর্মী। ২০১৯ সালে বালিভাসায় জাতীয় সড়কে একটি টোল প্লাজায় বেসরকারি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও জেলা নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই টাকা কি ঘুরপথে মহাসচিবের কাছে পৌঁছেছিল? এমন সব প্রশ্নও তুলছেন কর্মীদের একাংশ।

পার্থ ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলার এক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘ইডি, সিবিআই নিয়ে আমার চিন্তা নেই। আমি কিছু করলে তো আমার ভয় থাকবে!’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা পার্থ সংক্রান্ত বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর দাবি, বিরোধীরা নানা কুৎসা রটনা করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement