জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে বালকের মৃত্যু ঘাটালে

মৃত্যুতে টনক নড়েছে, জোর টিকাকরণে

টিকা নিলেই ঠেকানো যেতে পারে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। যদিও সেই টিকাকরণের কাজেই থেকে গিয়েছে খামতি। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বাচ্চাদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩৮
Share:

সচেতনতায়: এলাকায় ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার।নিজস্ব চিত্র

টিকা নিলেই ঠেকানো যেতে পারে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস। যদিও সেই টিকাকরণের কাজেই থেকে গিয়েছে খামতি। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বাচ্চাদের জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের টিকা দেওয়া হয়েছে। যদিও জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত বছর দশের সৌরভ ধাড়ার মৃত্যুর পর জানা গিয়েছে, তার এই টিকা নেওয়াই ছিল না। তাহলে কি টিকাকরণের কাজেই নজরদারির অভাব রয়ে গিয়েছে, উঠছে সেই প্রশ্ন।

Advertisement

চলতি বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২১টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ৪টিতে ১৬-৬৫ বছর বয়স্কদের জেই (জাপানি এনসেফ্যালাইটিস) টিকা দেওয়া হয়েছে। যদিও বাকি ব্লকগুলিতে টিকা দেওয়ার কাজ এখনও শুরুই হয়নি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, “জাপানি এনসেফ্যালাইটিস রোগ আটকাতে টিকাকরণই একমাত্র উপায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে সিংহভাগ রোগীরই মৃত্যু হয়। আর সুস্থ হলেও শরীরে কোনও না কোনও অঙ্গ বিকল হয়ে যায়।’’ তাহলে কেন স্বাস্থ্য দফতর এখনও সব ব্লকে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারেনি। সদুত্তর নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, স্ত্রী কিউলেক্স মশা থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ছড়ায়। শুয়োর ও পরিযায়ী পাখিরা এই জীবাণুর বাহক। এ ছাড়া নোংরা জল এবং কচুরিপানা ভর্তি পুকুরও এই মশার আঁতুরঘর। জাপানি এনসেফ্যালাইটিস ঠেকাতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ২০০৮ সালে ১ -১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চা ও কিশোরদের জেই টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল। ২০০৯ সালে ফের সিদ্ধান্ত হয়, শুধুমাত্র ন’মাসের শিশুদের একবার করে জেই টিকা দেওয়া হবে। সেই মতোই এতদিন টিকাকরণ চলছিল। ২০১৫ সাল থেকে ন’মাসের বাচ্চাদের পাশাপাশি ১৬-২৪ মাস বয়সের শিশুদের দু’বার করে টিকা দেওয়া শুরু হয়।

Advertisement

গ্রামবাসীকে জ্বর নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

চলতি বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা-১, কেশপুর, সবং ও পিংলা ব্লকে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে ১৬-৬৫ বছর বয়স্কদের জেই টিকা দেওয়ার কাজ চলছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ওই ব্লকগুলিতে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ টিকাকরণের আওতায় এসেছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এমনিতেই শিশুদের দু’বার জেই টিকা দেওয়া হয়। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এখন বয়স্কদেরও ওই টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ বার জেলা জুড়েই যাতে এই কর্মসূচি শুরু হয় সে জন্য স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে।” কেন এতদিন জেলার সব ব্লকে টিকাকরণের জন্য পদক্ষেপ করা হয়নি? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, “স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশেই জেই টিকাকরণ হয়।”

গত ১৪ এপ্রিল ঘাটাল শহরের সিংহপুরের রাজবংশী পাড়ার বাসিন্দা সৌরভ জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যদিও সৌরভের টিকা না নেওয়ার খবর জানার পরই উদ্বেগে স্বাস্থ্য দফতর। প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি সব শিশুদের টিকাকরণের আওতায় আনা গিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক মানছেন, “সচেতনতার অভাবই এর মূল কারণ।” ফের জেলা জুড়েই জেই টিকা দেওয়ার জন্য তৎপর হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবু বলেন, “সব শিশুই যাতে এই টিকা নেয়, সে জন্য আমরা প্রচারে জোর দিচ্ছি।”

মঙ্গলবার সৌরভের বাড়ির এলাকায় যান মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি বিশেষ দল। তাঁরা সৌরভের বাবা-মার সঙ্গে কথা বলেন। বিলি করা হয় লিফলেট। গোটা এলাকায় ঘুরে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা প্রচার করেন, মশাবাহিত এই রোগ কী ভাবে ছড়ায়, এই রোগ প্রতিরোধেরই বা উপায় কী। পুরসভার পক্ষ থেকেও এলাকায় মশানাশক তেল স্প্রে করা হয়। স্থানীয় কাউন্সিলর নেপাল ঘোড়ুই বলেন, “গোটা গ্রামেই নিয়ম করে তেল স্প্রে করা হবে। ব্লিচিং পাউডারও ছড়ানো হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement