পটাশপুরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে খোকা ইলিশ। নিজস্ব চিত্র
কাঠফাটা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বেলা বাড়লে রাস্তাঘাটে হচ্ছে জনমানব শূন্য হচ্ছে। এমন গ্রীষ্ম কালে এগরা মহকুমার কিছু বাজারে মিলছে খোকা ইলিশ! তা-ও আবার কার্যত জলের দরে। এতেই বিস্মিত মৎস্যপ্রেমী বাঙালিদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, একে তো এটা ইলিশের মরসুম নয়, তার উপরে সমুদ্রে চলছে মাছ না ধরার ‘ব্যান পিরিয়ড’— তা হলে এই ইলিশ আসছে কোথা থেকে! বর্ষায় ইলিশের জোগান স্বাভাবিক রাখতে তাই মৎস্যপ্রেমীরা প্রশাসনকে বাজারগুলির উপরে নজরদারি চালানোর আর্জি জানাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দিঘা উপকূলের এগরা ও পটাশপুরের একাধিক বাজারে খোকা ইলিশের আমদানি হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে। দামও নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। ওই সমস্ত খোকা ইলিশের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কিলোগ্রাম ধরে বিক্রি হচ্ছে। খোকা ইলিশগুলির ওজন ৮০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের মধ্যেই থাকছে। সেগুলি কখনও কখনও তা ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা থাকলে সেই তুলনায় ওই ইলিশের তেমন জোগান নেই। সাধারণত বর্ষার সময়ে ইলিশের মরসুম শুরু হয় এই রাজ্যে। কিন্তু বর্ষা আসতে এখনো বাকি। পাশাপাশি, ১৪ এপ্রিল থেকে আগামী ১৫ জুন এক মাসের ‘ব্যান পিরিয়ড’ ঘোষণা করেছে মৎস দফতর (সামুদ্রিক)। অভিযোগ, সেই ব্যান পরিয়ডে উপেক্ষা করে একাংশ মৎস্যজীবী সমুদ্রে খোকা ইলিশ শিকার করছেন। এ ভাবে খোকা ইলিশ ধরা হলে তাদের প্রজননে ব্যঘাত ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্যান পিরিয়ডে যাতে সামুদ্রিক মাছ ধরা এবং বিক্রি না হয়, সেই বিষয়ে কঠোর নজরদারির প্রয়োজন। খোকা ইলিশ বিক্রির খবর সামনে আসার পরে রাজ্য মৎস দফতরের তরফে জেলা পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাজারগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। ব্যান পিরিয়ডের মধ্যে যাতে কোনও বাজারে সামুদ্রিক মাছ ও খোকা ইলিশ বিক্রি না হয় সেই দিকে বাড়তি নজর দিতে বলা হয়েছে তাতে। রাজ্য সহ-মৎস অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত কুমার প্রধান বলছেন, ‘‘এই সময়ে কোথাও সামুদ্রিক মাছ বিক্রি বা না ধরা হয়, সে জন্য নজরদারি চালাতে পুলিশ সুপারকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’’
কিন্তু এই খোকা ইলিশ আসছে কোথা থেকে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পটাশপুরের এক খুচরো মাছ বিক্রেতা বলছেন, ‘‘লুকিয়ে এই মাছ দিঘা ও শঙ্করপুরের পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। আবার কিছু মাছ পারাদ্বীপ থেকে এই রাজ্যে আমদানি করা হচ্ছে।’’ আবার, জেলার মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রের খবর, কাঁথির শৌলা, মন্দারমণি, সুতাহাটা থেকে কিছু ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ছোট ছোট নৌকো নিয়ে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। তাঁদের জালে খোকা ইলিশ ধরা পড়ছে বলে মৎস্যজীবীদের দাবি। পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক তমাল তরু দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘কিছু কিছু জায়গায় আইন অমান্য করে ব্যান পিরিয়ডেও মৎস্যজীবীরা মাছ ধরছেন। প্রশাসনের কঠোর ভাবে পদক্ষেপ করা উচিত।’’