মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের পর বেহাল ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
এক সপ্তাহ হয়ে গেল মুখ্যমন্ত্রীর মিলন অনুষ্ঠান হয়েছে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। এখনও গোটা মাঠ জুড়ে বাঁশের কাঠামো। হুঁশ নেই প্রশাসনের। গত কয়েকদিন ধরে সমানে চলছে বাঁশ খোলার কাজ। মাঠের যত্রতত্র পড়ে রয়েছে কাপড়ের টুকরো, বাঁশ, বাটাম, পেরেক। মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য গোটা মাঠে প্রায় আড়াই হাজার খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। সেগুলো এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে মাঠের উপর।
ফলে ওই মাঠে খেলাধুলো বন্ধ। সমস্যায় পড়েছেন প্রাতঃভ্রমণকারীরাও। ২ নভেম্বর এখানেই বিজয়া সম্মিলনীর ধাঁচে মিলন অনুষ্ঠান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। তবে মঞ্চ তৈরির দায়িত্ব ছিল পূর্ত দফতরের। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন হাজার তিনেক মানুষ। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সবাইকে মিষ্টি ও নোনতা খাবারের প্যাকেট দিয়ে আপ্যায়িত করাও হয়েছিল।
আমন্ত্রিত সেই সব অতিথিদের জন্য স্টেডিয়ামের ভিতরে মাঠের এক পাশেই পলিথিন ঘিরে অস্থায়ী প্রস্রাবাগার তৈরি করা হয়েছিল। এখনও মাঠে ম ম করছে দুর্গন্ধ। খাবারের প্যাকেট, উচ্ছিষ্ট খাবার, প্ল্যাস্টিকের জলের বোতল, প্যাকেট, নানা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মাঠ জুড়ে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঝাড়গ্রামের ঐতিহ্য এই স্টেডিয়াম। গোড়া থেকে স্টেডিয়াম দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ঝাড়গ্রাম মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদল। ওই বছরের অক্টোবরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামটির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য শিলান্যাস করেছিলেন। দু’দফায় বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় দু’কোটি টাকা। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে স্টেডিয়ামের ও মাঠের সংস্কার-সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু তারপর চার বছর হতে চলল, পূর্ত দফতর এখনও মহকুমা ক্রীড়া সংস্থাকে স্টেডিয়ামটির দায়িত্ব হস্তান্তর করেনি।
মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভা করলে প্রতিবার সভাস্থলের জন্য স্টেডিয়ামের মাঠটিকে ব্যবহার করা হয়। প্রতিবারই সভার পরে মাঠটি চেহারা ঠিক এমনই হয়ে থাকে বলে অভিযোগ করেন বাসিন্দারা। বন্ধ হয়ে যায় খেলাধুলা। তবে এ বার গোটা মাঠ জুড়ে মজবুত সভামঞ্চ বানাতে গিয়ে গোটা মাঠটির দফারফা হয়ে গিয়েছে।
অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের জন্য ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে মহকুমা ফুটবল লিগের পরবর্তী খেলাগুলি পিছিয়ে গিয়েছে। ২৩ অক্টোবর ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে অনুর্ধ্ব-১৪ ও অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবিরের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু তারপরই পূর্ত দফতর মাঠ বন্ধ করে দেয়। সভার পরও মাঠ খেলার উপযুক্ত হয়নি। ফলে উদ্যোক্তারা অন্য মাঠে ফুটবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
কেন বার বার মাঠটিকে এ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন শহরবাসীর একাংশ। ঝাড়গ্রামের অন্য কোনও মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলের জন্য স্থায়ী পরিকাঠামো তৈরির পক্ষেও সওয়াল করছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। ঝাড়গ্রাম মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত মাহাতো বলেন, “স্টেডিয়ামের মাঠটি একেবারে খেলাধুলোর অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে মাঠটির সংস্কারের জন্য পূর্ত দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।” বিরোধীরা অবশ্য এই প্রেক্ষিতে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “এলাকার খেলাধুলার মানোন্নয়ন নিয়ে রাজ্য সরকার ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। অথচ ঝাড়গ্রাম শহরের একমাত্র স্টেডিয়ামটিকে সরকারি উদ্যোগেই সভাস্থল বানিয়ে তিলে তিলে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।”
পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেবও মানছেন, মাঠটি খেলাধুলোর অনুপযুক্ত হয়ে গিয়েছে। দুর্গেশবাবু বলেন, “পূর্ত দফতর মাঠটি সংস্কার করে দেবে। মুখ্যমন্ত্রীর সভাস্থলের জন্য বিকল্প জায়গার খোঁজ করছি।” পূর্ত দফতরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ বিশ্বাসের দাবি, “মাঠটিকে আগের অবস্থায় ফেরানো শুরু হয়ে গিয়েছে।”