হিরাডিতে পুরসভার আবর্জনা ফেলার জমিতে ঝুলছে তালা। নিজস্ব চিত্র
আবর্জনা ফেলা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে সংঘাতে আদিবাসীরা। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপন প্রকল্প এলাকায়। হয়েছিল মহকুমাশাসকের কার্যালয় ঘেরাও। রাত পর্যন্ত চলে আলোচনা। এর পরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের ঘেরাও উঠলেও তালা খোলা হয়নি পুরসভার প্রকল্প এলাকায়। শহরের আবর্জনা ফেলার জমি নিয়ে চরম সঙ্কটে পড়ল পুরসভা!
মঙ্গলবারও খড়্গপুর গ্রামীণের হিরাডিতে খোলা হল না পুরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপন প্রকল্প এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনে নেমে সোমবার ওই প্রকল্প এলাকার গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল আদিবাসী সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’। এর পরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের একাংশ কর্মীকে বার করে দিয়ে গেট ঘেরাও করে ওই আদিবাসী সংগঠন। রাত পর্যন্ত চলে ঘেরাও। সঙ্গে চলে প্রশাসনিক আলোচনা। শেষে রাতে পুরসভা, আদিবাসী ওই সংগঠনের নেতৃত্বর সঙ্গে খড়্গপুর-১ ব্লক অফিসে আলোচনায় বসে প্রশাসন। সেই আলোচনায় ২৮ এপ্রিল পরবর্তী আলোচনার দিন ঠিক করা হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ করে প্রশাসন। এর পরেই মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে ঘেরাও আন্দোলন তুলে নেয় আদিবাসীরা। তবে খোলা হয়নি প্রকল্প এলাকার গেটে ঝোলানো তালা। এমন ঘটনায় শহরের আবর্জনা কোথায় ফেলা হবে তা নিয়ে বিপাকে পড়েছে পুরসভা। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “মহকুমাশাসকের অফিসের গেট থেকে ঘেরাও তুললেও হিরাডির আবর্জনা ফেলার জায়গার তালা খোলেনি। আমরা আলোচনা চালাচ্ছি কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়!”
রাত পর্যন্ত যে আলোচনা হয়েছে তাতে গ্রামীণের হিরাডির জমিতে থাকা পুরসভার প্রকল্প এলাকার গেটে থাকা তালা খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে আদিবাসী এই সংগঠনের দাবি। কারণ, হিরাডির ওই জমিতে যে ভাবে পুরসভা আবর্জনা ফেলছে তাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আশপাশের গ্রামবাসীর টেকা দায় হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিদিন ৭০-৭২ মেট্রিক টন আবর্জনা তুলে হিরাডির ওই জমিতে ফেলা ঘিরে বছর কয়েক ধরেই হিরাডির স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘাত চলছিল। মামলা গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। একসময়ে আদালত ওই এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি চালুর কথা বলে অন্যত্র আবর্জনা ফেলার কথা বলেছিল। সেই মতো গ্রামীণের গোপালী এলাকায় একটি জমিও হাতে পায় পুরসভা। তবে আবর্জনা ফেলা হচ্ছিল হিরাডির জমিতে। এমনকি হিরাডিতে প্রকল্প গড়ে শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপন পদ্ধতি চালুর করা হয়েছে বলেও দাবি করেন পুর কর্তৃপক্ষ। তবে আবর্জনার স্তূপ বাড়তে থাকা এ বার স্থানীয়দের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনে নেমেছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল।
এ দিন এই আদিবাসী সংগঠনের অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা জব পরগানা মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু বলেন, “তালা খোলার বিষয়ে রাত পর্যন্ত হওয়া বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি। আমরা আলোচনা করে জানাব বলেছিলাম। কিন্তু আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা ওটা বন্ধ রেখেছি। তাছাড়া ওখানে এখনও পুরসভা কোনও বর্জ্য ব্যবস্থাপন প্রকল্প চালুই করেনি।” খড়্গপুরের মহকুমাশাসক দিলীপ মিশ্র বলেন, “রাতের আলোচনায় ওরা(আদিবাসী সংগঠন) আমাদের কার্যালয় ও হিরাডির ওখান থেকে আন্দোলন তুলে নেবে বলেই জানিয়েছিল। কিন্তু হিরাডিতে পুরসভার আবর্জনা ফেলার জমির তালা খোলেনি। পুরসভা বিষয়টি দেখছে।”
আপাতত কোথায় ফেলা হবে আবর্জনা সেই নিয়ে এ দিনও দিনভর আলোচনা চলেছে। সেক্ষেত্রে গোপালীর জমি ব্যবহার করা যায় কি না সেই আলোচনাও হয়েছে। পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, “গোপালীর যে জমি রয়েছে সেটা জলা জমি। আমি নতুন পুরপ্রধান হয়েছি। দেখছি কি করা যায়!” বিষয়টি নিয়ে মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, “পুরসভা-প্রশাসনের বসে আলোচনা করে জায়গা খোঁজা উচিত। নাহলে আবর্জনা শহরে পরিষ্কার হবে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হবে। নতুন পুরপ্রধান নিশ্চয় সমাধান করবেন আশা করব।”