জ্বরে আক্রান্ত শিশু। প্রতীকী চিত্র।
জ্বর ও শ্বাস কষ্টের উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাতেই অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে। মঙ্গলবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নির্দেশিকা জারি করে প্রয়োজনীয় সবরকম পদক্ষেপ করার কথা বলেছে। আক্রান্তদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি, দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য হাসপাতালে পরিকাঠামো প্রস্তুত করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে তৎপরতা শুরু হয়েছে। তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ জেলার সব মহকুমা হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আক্রান্তদের ভর্তি করেচিকিৎসা চলছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট উপসর্গ শিশুদের ভর্তির প্রবণতা বেড়েছে। তমলুক পুরসভা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পুরসভা এলাকায় চারজন শিশুর অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ মিলেছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিভাগে ২৪টি শয্যা রয়েছে। ওই সব শয্যার একাংশেই জ্বর, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ যুক্ত শিশুদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। হাসপাতালের অধ্যক্ষ শর্মিলা মল্লিক বলেন, ‘‘সপ্তাহ খানেক আগ থেকেই জ্বর, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিন ১২-১৩ জন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছিল। অনেকেই সুস্থ হয়ে ফিরেছে। তবে এখন শিশু ভর্তির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। মঙ্গলবার আট জন শিশু চিকিৎসাধীন ছিল।’’
পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলা ও নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার আধিকারিকরা মঙ্গলবার জেলার ব্লক ও পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করা ও তাঁদের চিকিৎসা করার জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সে ব্যাপারে সেখানে জানিয়েছেন। ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করতে জেলার সব এলাকাতে আশা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেতে বলা হয়েছে। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত সমস্ত শিশুদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ রয়েছে কি না জানতে হবে। ওই সব উপসর্গ থাকলে তাদের দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। গত সোমবার থেকে জেলার সব ব্লক ও পুরসভা এলাকায় আশা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। আগামী এক সপ্তাহ ধরে ওই কাজ চলবে।
অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, হলদিয়া, কাঁথি, মহকুমা হাসপাতাল, নন্দীগ্রাম, এগরা, পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও শিশুদের ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগরা মহকুমা হাসপাতালে শিশুদের জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট রয়েছে। সেই সঙ্গে ১৭৬ টি শয্যা বিশিষ্ট বিভাগ রয়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে এক মাস বয়সি পর্যন্ত শিশুদের সরাসরি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালের আউটডোরে আসা শিশুদের শারীরিক পরীক্ষায় অ্যাডিনো ভাইরাসের উপসর্গ থাকলে তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সব হাসপাতালের আউটডোর, জরুরি বিভাগে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন। পূর্ব মেদিনীপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় বলেন, ‘‘উপসর্গ সহ শিশুদের চিহ্নিত করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির জন্য ওয়ার্ড চালু হয়েছে।’’
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধার কথায়, ‘‘নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি, কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল এবং দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শিশুদের জন্য ওয়ার্ড চালু রয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে অসুস্থ শিশুদের তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই স্বাস্থ্য জেলায় এখনও উপসর্গ যুক্ত একজনও শিশু চিহ্নিত হয়নি।’’