মন্ত্রীত্ব হারালেন অখিল গিরি। —ফাইল চিত্র।
দলের অন্দরে বিরোধী গোষ্ঠীর চক্রান্তে পা দিয়েই অখিল গিরিকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হল বলে মনে করছেন তাঁর ঘনিষ্ঠদের অনেকেই।
উত্তম বারিক গোষ্ঠীর সঙ্গে অখিল-গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধ্বমান বিবাদ চাপা ছিল না। দু’জনের মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছিল। পটাশপুরে উত্তম বারিক জেতার পর তৃণমূলের প্রকাশ্য সভা ও সমাবেশ পটাশপুরে অখিল গিরি বা তাঁর ছেলেকে দেখা যায়নি। উত্তমের রাজনৈতিক উত্থানের পাশাপাশি পটাশপুরের একাধিক নেতা রাজনৈতিক পদোন্নতি ঘটে। একটা সময় অখিলকে দলের গুরুত্বহীন হয়ে যান। তাজপুরে দোকান উচ্ছেদ নিয়ে মহিলা বন আধিকারিকের সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে অখিলের কু-কথা বলে ফেলার পিছনে দলের অনেকেই ‘অন্তর্ঘাত’ দেখেছেন।
তাঁদের মতে, ভিতর থেকে কারও সমর্থন না পেলে আখিলের নির্দেশকে অমান্য করার কথা বন দফতরের কোনও অফিসার দেখাতেন না। এর পিছনে দলের বিপক্ষ গোষ্ঠীর মদত ছিল। মন্ত্রীকে হেয় করতেই বিপক্ষ গোষ্ঠীর নেতারা বন আধিকারিককে মাঠে নামিয়েছিল বলে মত বিজেপিরও। সেই ফাঁদে অখিল পা দেওয়ার মন্ত্রিত্ব হারালেন বলে তাদের দাবি।
কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সহ সভাপতি স্বপন রায় বলেন, ‘‘দলের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন অখিল গিরি। গিরি পরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তৃণমূলের এক গোষ্ঠী প্রশাসনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বন দফতরকে মাঠে নামিয়েছিলেন। সেই ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন অখিল।’’ এই অভিযোগ সম্পর্কে পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক অবশ্য বলেন, ‘‘ এই সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করব না। নেত্রী নিজেই হস্তক্ষেপ করেছেন। যা বলার উনিই বলবেন।’’
সোমবার হোয়াটসঅ্যাপে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দেন অখিল। বাবার পাশে দাঁড়িয়ে অখিল-পুত্র তথা কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সুপ্রপ্রকাশ গিরি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘'অসহায় গরিব দলিত পরিবারের মানুষদের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জিততে পারনি। হেরে গিয়ছ। মাথা নিচু নয়, উঁচু করেই ইস্তফা দিয়েছ।’’
দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূল শুদ্ধিকরণের পথে হাঁটবে বলে ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি থেকে বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। খানিকটা ওই প্রসঙ্গ টেনে দলীয় নেতৃত্বকে কিঞ্চিৎ ঠেস দিয়ে সুপ্রকাশ এ দিন আরও লিখেছেন, ‘‘যাক, অন্তত দুর্নীতির দায়ে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত হতে হয়নি, সাসপেন্ড হতে হয়নি বা ইস্তফা দিতে হয়নি।’’
শুভেন্দুর দলবলদলে জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক সঙ্কটে পূর্ব মেদিনীপুর তথা পটাশপুরে দলের হাল ধরেছিলেন অখিল গিরি। ২০২২ সালে পটাশপুরে বিধানসভা ভোটে অখিলের হাত ধরেই হারতে বসা তৃণমূল পটাশপুরে ঘুরে দাঁড়ায়। এহেন নেতা মন্ত্রিত্ব হারানোয় হতাশ তাঁর ঘনিষ্ঠরা। রামনগর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি উত্তম দাস বলছেন, ‘‘ওঁর আন্দোলন যথার্থ ছিল। দল যা নির্দেশ দিয়েছে সেটা নিয়ে কিছু বলার নেই। অখিলদা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আন্দোলন করছেন। উনি আবার সেই ধারাতেই সক্রিয় হবেন।’’ আবার রামনগর-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সত্য রঞ্জন রায় বলেন, ‘‘বিধায়ককে সাধুবাদ জানাবো আধিকারিকের কাছে ক্ষমা চাননি বলে। আমাদের বিশ্বাস, অখিলকে যোগ্য সম্মান দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
এ দিন সিপিএমের রাজ্য কমিটির নেতা হিমাংশু দাস প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যে ঘটনার জন্য অখিলকে সরানো হচ্ছে তার জন্য কোনও লিখিত অভিযোগ হল না কেন?’’ আর বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেছেন, ‘‘বন দফতরের বিরুদ্ধে যে সব দুর্নীতির অভিযোগের কথা রামনগরের বিধায়ক তুলেছেন সেগুলোর তদন্ত কবে করবে রাজ্য সরকার?’’